পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ეხrür রবীন্দ্র-রচনাবলী এখন দেখা যাক, বসন্তকালের বিরহ ও বর্ষাকালের বিরহে প্ৰভেদ কি । বসন্তকালে আমরা । বহির্জগৎ উপভোগ করি ; উপভোগের সমস্ত উপাদান আছে, কেবল একটি পাইতেছি না ; উপভোগের একটা মহা অসম্পূর্ণতা দেখিতেছি। সেই জন্যই আর কিছুই ভালো লাগিতেছে না। এত দিন আমার সুখ ঘুমাইয়াছিল, আমার প্রিয়তম ছিল না ; আমার আর কোনো সুখের উপকরণও ছিল না। কিন্তু জ্যোৎস্না, বাতাস ও সুগন্ধে মিলিয়া ষড়যন্ত্র করিয়া আমার সুখকে জাগাইয়া তুলিল; সে জাগিয়া দেখিল তাহার দারুণ অভাব বিদ্যমান। সে কঁদিতে লাগিল। এই রোদানই বসন্তের বিরহ । দুর্ভিক্ষের সময় শিশু মরিয়া গেলেও মায়ের মন অনেকটা শান্তি পায়, কিন্তু সে বঁাচিয়া থাকিয়া ক্ষুধার छुलाश कैनिष्ठ शकिल ऊँोशल कि कहें ! বর্ষাকালে বিরহিণীর সমস্ত “আমি” একত্র হয়, সমস্ত “আমি” জাগিয় উঠে ; দেখে যে বিচ্ছিন্ন “আমি", একক “আমি” অসম্পূর্ণ। সে কঁদিতে থাকে। সে তাহার নিজের অসম্পূর্ণতা পূর্ণ করিবার জন্য কাহাকেও খুঁজিয়া পায় না। চারিদিকে বৃষ্টি পড়িতেছে, অন্ধকার করিয়াছে ; কাহাকেও পাইবার নাই, কিছুই দেখিবার নাই ; কেবল বসিয়া বসিয়া অন্তর্দশের অন্ধকারবাসী একটি অমম্পৰ্ণ, সঙ্গীহীন “আমি"র পানে চাহিয়া চাহিয়া কঁদিতে থাকে। ইহাই বর্ষাকালের বিরহ। বসন্তকালে বিরাহিণীর জগৎ অসম্পূর্ণ বর্ষাকালে বিরহিণীর “স্বয়ং” অসম্পূর্ণ। বর্ষাকালে আমি আত্মা চাই, বসন্তকালে আমি সুখ চাই । সুতরাং বর্ষাকালের বিরহ গুরুতর। এ বিরহে যৌবন মদন প্রভৃতি কিছুই নাই, ইহা বস্তুগত নহে। মদনের শর বসন্তের ফুল দিয়া গঠিত, বর্ষার বৃষ্টিধারা দিয়া নহে। বসন্তকালে আমরা নিজের উপর সমস্ত জগং স্থাপিত করিতে চাহি, বর্ষাকালে সমস্ত জগতের মধ্যে সম্পূর্ণ আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করিতে চাহি | ঋতুসংহারে কালিদাসের কাচা হাত বলিয়া বোধ হয়, তথাপি তিনি এই কাব্যে বর্ষা ও বসন্তের যে প্রভেদ দেখাইয়াছেন তাহাতে তঁহকে কালিদাস বলিয়া চিনা যায়। বসন্তের উপসংহারে তিনি বলেন মলয়পবনবিদ্ধঃ কোকিলেনাভিরাম্যা সুরভিমধুনিয্যেকাল্পদ্ধগন্ধপ্রবন্ধঃ । বিবিধমধুপযুথৈবেষ্ট্যমনঃ সমস্তাদ ভবতু তব বসন্তঃ শ্রেষ্ঠকালিঃ সুখায় | t কবি আশীৰ্বাদ কবিতেছেন, বাহসৌন্দর্যবিশিষ্ট বসন্তকাল তোমাকে সুখ প্ৰদান করুক। বর্ষায় কবি আশীৰ্বাদ করিতেছেন বহুগুণ রমণীয়ে যোষিতং চিত্তহারী তরুবিটপলতানাং বান্ধবো নির্বিকারঃ । জলদসময় এষ। প্রাণিনাং প্রাণহেতুরদিশতু তব হিতানি প্রায়শা বাঞ্ছিতানি | বর্ষাকাল তোমাকে তোমার বাঞ্ছিত হিত অৰ্পণ করুক। বর্ষাকাল তো সুখের জন্য নহে, ইহা মঙ্গলের জন্য। বর্ষাকালে উপভোগের বাসনা হয় না, “স্বয়ং"-এর মধ্যে একটা অভাব অনুভব হয়, একটা অনিৰ্দেশ্য বাঞ্ছা জন্মে।