পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ved Ve রবীন্দ্র-রচনাবলী পশ্চাতে বাধিয়া লয়, এইরূপে এমন শত শত নীেকা পার পায় । সমাজের স্রোত নাকি প্ৰায় একটানা, বিনাশের সমুদ্রমুখেই তাহার স্বাভাবিক গতি । উন্নতির পথে অমরতার পথে যাহাকে যাইতে হয়, তাহাকে উজান বাহিয়া যাইতে হয়। যে-সকল দাড় ও পাল -বিহীন নীেকা স্রোতে গা-ভাসান দেয়, প্রায় তাহারা বিনাশসমুদ্রে গিয়া পড়ে। সমাজের অধিকাংশ নীেকাই এইরূপ, প্রত্যহ রাম শ্যাম প্রভৃতি মাঝিগণ আনন্দে ভাবিতেছে, ‘যেরূপ বেগে ছুটিয়াছি, না জানি কোথায় গিয়া পৌছাইব।” একটি একটি করিয়া বিস্মৃতির সাগরে গিয়া পড়ে ও চােখের আড়াল হইয়া যায়। সমুদ্রের গর্ভে ইহাদের সমাধি, স্মরণস্তম্ভে ইহাদের নাম লিখা থাকে না। বুদ্ধি খাটাইয়া যাহাদের অগ্রসর হইতে হয় তাহাদের বলে- দাড়টানা নীেকা। অত্যন্ত মেহন্নত করিতে হয়, উঠিয়া পড়িয়া দাড় না। টানিলে চলে না। কিন্তু তবুও অনেক সময়ে স্রোত সামলাইতে পারে না । অসংখ্য দাড়ের নীেকা প্ৰাণপণে দাড় টানিয়াও হটিতে থাকে, অবশেষে টানাটানি করিতে কাহারও বা দাড় হাল ভাঙিয়া যায় । সকলের অপেক্ষা ভালো চলে পালের নীেকা । ইহাদের বলেপ্রতিভার নীেকা । ইহারা হঠাৎ আকাশের দিক হইতে বাতাস পায় ও তীরের মতো ছুটিয়া চলে। স্রোতের বিরুদ্ধে ইহারাই জয়ী হয় । দোষের মধ্যে যখন বাতাস বন্ধ হয়, তখন ইহাদিগকে নোঙর করিয়া থাকিতে হয়, আবার যখনি বাতাস আসে তখনি যাত্রা আরম্ভ করে । আর একটা দোষ আছেপালের নীেকা হঠাৎকােত হইয়া পড়ে। পার্থিব নীেক হাল্কা, অথচ পালে স্বগীয় বাতাস খুব লাগিয়াছে, ঝন্টু করিয়া উলটাইয়া পড়ে। কেহ কেহ এমন কথা বলেন যে, সকলেরই কল বাহির হইতেছে, বুদ্ধিরও কল বাহির হইবে, তখন আর প্রতিভার পালের আবশ্যক করিবে না- মনুষ্যসমাজে স্টীমার চলিবে । মানুষ যতদিন অসম্পূর্ণ মানুষ থাকিবে ততদিন প্রতিভার আবশ্যক। যদি কখনো সম্পূর্ণ দেবতা হইতে পারে তখন কি নিয়মে চলিবে, ঠিক বলিতে পারিতেছি না। প্রতিভার কল বাহির করিতে পারে, এত বড়ো প্ৰতিভা কোথায় ? ফল ফুল পাঠক-খরিদার লেখক-ব্যাপারীর প্রতি— “কোন হে, আজকাল তোমার এখানে তেমন ভালো ভাব •3शी शाश न का ?” লেখক- “মহাশয়, আমার এ ফল ফুলের দোকান। মিঠাই মণ্ডার নহে, যে, নিজের হাতে গড়িয়া দিব । আমার মাথার জমিতে কতকগুলা গাছ আছে । আপনি আমার সঙ্গে বন্দোবস্ত করিয়াছেন, আপনাকে নিয়মিত ফল ফুল যোগাইতে হইবে । কিন্তু ঠিক নিয়ম-অনুসারে ফল ফুল ফলেও না, ফুটেও না ; কখন ফলে, কখন ফুটে বলিয়া অপেক্ষা করিয়া থাকিতে হয়। কিন্তু তাহা করিলে চলে না, আপনি প্রত্যহ তাগাদা করিতে থাকেন, কই হে, ফুল কই, ফল কই ? ফল ধোয়া দিয়া বলপূর্বক পাকাইতে হয়, কাজেই আপনারা গাছপাকা ভাবটি পান না । এমন একটা প্ৰবন্ধ তৈরি হয়, তাহার আঁঠির কাছটা হয়ত টক, খোসার কাছে হয়ত ঈষৎ মিষ্ট ; তাহার এক জায়গায় হয়ত থলথোলে, আর এক জায়গায় হয়ত কঁাচা শক্ত । ফুল ছিড়িয়া ফোটাইতে হয় ; এমন একটা কবিতা তৈরি হয় যাহার ভালোরাপ রঙ ধরে নাই, গন্ধ জন্মে নাই, পাপড়িগুলি কেঁকড়ানো। রহিয়া বসিয়া কিছু করিতে পারি না, সমস্তই তাড়াতাড়ি করিতে হয়। দেখুন দেখি গাছে কত কুঁড়ি ধরিয়াছে ! কি দুঃখ যে, গাছে রাখিয়া ফুটাইতে পারি না। আমাদের দেশীয় কন্যার পিতারা যেমন মেয়ে কুড়ি গাছে রাখিতে পারেন না, ৮ বৎসরের কুঁড়িটিকে ছিড়িয়া বিবাহ দিয়া বলপূর্বক ফুটাইয়া তুলেন ও বেচারিদের বিশ বৎসরের মধ্যে