পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

test VO খুশি করাচ্ছি। তাকে রাজি করানাে গেছে। এখন গ্রামের লোকের হাত থেকে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সন্দু, তুমিও এ কাজে সাহায্য করো।” “ওমা, করব না তো কী ! ও তো আমার কর্তব্য । আহা, তোমাদের গিরিশের মেয়ে, আমাদের মিনু’। সে তো কোনাে অপরাধ করে নি। তার বিয়ে তো হওয়াই চাই। আনো তোমার বৃন্দাবনবাসীকে, আমি জানি ঐ সব স্বামীজিদের কী করে আদর-যত্ন করতে হয়।” এলেন বৃন্দাবনবাসী। বুকে লুটিয়ে পড়ছে সাদা দাড়ি, নারদ মুনির মতো। সন্দু ভক্তিতে গদগদ হয়ে পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ল, পাড়ার লোক তার প্রণামের ঘটা দেখে হেসে বঁাচে না । প্ৰবীণা প্রতিবেশিনী মূচকে হেসে বললেন, “সাধু-সন্ন্যাসীদের প্রতি তোমার এত ভক্তি হঠাৎ জেগে উঠল কী করে ।” সদু হেসে বললে, “দরকার পড়লেই ভক্তি উথলে ওঠে। বাবাঠাকুরেরা পায়ের ধুলো নিলে গলে যান। মিনুর বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমার ভক্তিটাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।” ঘন ঘন শাখ বেজে উঠল, উলুর সঙ্গে বর আসার শব্দ এল চার দিক থেকে । কনেকে একটি চেলী-জড়ানো পুঁটুলির মতো করে এয়োর দল নিয়ে এলছাদনাতলায়। নির্বিয়ে কাজ সমাধা হল । বর কনে বাবাজিকে প্ৰণাম করে অন্দরে যাবার জন্য উঠে দাঁড়াল, তখন বাবাজি আশীৰ্বাদ শেষ করে বিজয়বাবুকে আর সভােব সবাইকে বললেন, “মশায়, আমার খবরটা এবারে দিয়ে যাই । পুরুতের কাজ আমার পেশা নয় । আমার যা পেশা সে আপনার সমস্ত দারোগা-কনেস্টবলদের ভালো করেই জানা আছে। এখন আপনাদের পুরুতের দক্ষিণা দেবার সময় এসেছে। সে পর্যন্ত আমার আর সবুর সইবে না । অতএব আপনারা বিদায় করবার আগেই আমি বিদায় নিলেম ।” এই বলে সন্ন্যাসী সকলের সামনে দাড়ি গোফ টেনে ফেলে তিন লাফে চণ্ডী-মণ্ডপের পাচিল fife, see সভার লোকেরা হা করে চেয়ে রইল। বিজয়বাবুর মুখে কথা নেই। বিয়ের ভােজ শেষ হয়ে গেছে, পাড়াপাড়শী গেছে যে যার ঘরে । বরবধূ বাসর ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছে। সন্দু স্বামীকে বললে, “তুমি ভাবছ কী, যেমন করে হােক কাজ তো উদ্ধার হয়ে গেছে। সন্ন্যাসী উধাও হয়ে গিয়ে তোমাদেরই তো কাজ হালকা করে দিয়ে গেল । এখন বাসিবিয়ের আয়োজন করতে হবে, চোর-ডাকাতের পিছনে সময় নষ্ট কোরো না । কিন্তু সেই মেয়েটির কোনো খোজ পেলে কি ?” “দুঃখের কথা বলব কী, এখন একটি মেয়ের জায়গায় রোজ আমার থানার সামনে পঁচিশটি মেয়ের আমদানি হচ্ছে চাল কলা নৈবেদ্য নিয়ে। এখন কোনটি যে কে খোজ করা শক্ত হয়ে উঠল।” মৃত্যুমার দরজায় এত মেহের আমদানি তো ভালো নয় । ওখানে তুমি কি বাবাজি সেজে বসেছ ן" "না, লোকটার চালাকির কথা শোনো একবার, অবাক হবে । একদিন হঠাৎ কিষণলাল এসে খবর দিলে আফিসের সামনের রাস্তায় একটি পাথর বেরিয়েছে। তার গায়ে পাড়ার মেয়েরা এসে সিঁদুর লাগাচ্ছে, চন্দন মাখাচ্ছে ; কেউ চাইতে এসেছে সন্তান, কেউ স্বামীসৌভাগ্য, কেউ আমারই সর্বনাশ । এই ভিড় পরিষ্কার করতে গেলেই খবরের কাগজে মহা হাউমাউ করে উঠবে যে এইবার হিন্দুর ধর্ম গৈল । আমার হিন্দু পাহারাওয়ালারাও তাকে পাচ সিকা করে প্রণামী দেয়। ব্যবসা খুব জমে উঠল। টাকাগুলো কে আদায় করছে। অবশেষে সেটার দিকে চােখ পড়ল। একদিন দেখা গেল।-- না আছে পাথরটা, না আছে টাকার থালা। আর সেই পাগলা গোছের লোকটা সেও তার সাজ বদলে কোথায় যে গা-ঢাকা দিল সে সম্বন্ধে নানা অদ্ভুত গুজব শোনা যেতে লাগল। মুশকিল এইঃ- হিন্দুধর্মের *ী:ইরাওয়ালারা হাংগার-স্ট্রাইকের ভয় দেখাতে থাকে । এই নিয়ে যদি শান্তিভঙ্গ হয় তা হলে আবার সকলের কাছে আমাকে জবাবদিহি করতে প্ৰাণ বেরিয়ে যাবে। এখন কোনদিক সামলাই। আর-এক উৎপাত ঘটেছে, একদিন ছেদীলাল এসে পড়ল পুলিসের থানার দরজায় দাড়াম করে। ইউমাউ করে