পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓለSbr রবীন্দ্র-রচনাবলী ও কি নীরজ, তোমার মুখখানি অমন মলিন হয়ে এল কেন ? নীরজা। প্রিয়তম, তোমার সেই পুরনো দিনগুলির মধ্যে আমি তো একেবারেই ছিলুম না ! এমন এক দিন ছিল যখন তুমি আমাকে একেবারেই জানতে না, একেবারেই আমি তোমার পর ছিলুমতখন যদি কেউ গল্পচ্ছলে আমার কথা-তোমার কাছে বলত তুমি হয়ত একটিবার মন দিয়ে শুনতে না, যদি কেউ বলত আমি মরে গেছি, তোমার চোখে একটি ফোটা জল পড়ত না ! এককালে-যে আমি তোমার কেউই ছিলুম না। এ মনে করলে কেমন প্ৰাণে ব্যথা বাজে ! অনন্তকাল হ’তে আমাদের মিলন হয় নি কেন ? নীরদ । কেন হয় নি। নীরজা ? এই মধুর গাছপালাগুলি তোমার স্মৃতির সঙ্গে কেন জড়িয়ে যায় নি ? আর একজনের কথা কেন মনে পড়ে ? আহা, যদি সেই জীবনের প্রভাতকালে তোমার ঐ প্রশান্ত মুখখানি দেখতে পেতেম ! তোমার এই উদার মমতা, গভীর প্ৰেম, অতলস্পর্শ হৃদয় নীরজা। থাক থাক ও-সব কথা থাক— ঐ বুঝি সব গ্রামের লোকেরা আসছে! ঐ শোন বঁাশি বেজে উঠেছে। তবে বুঝি উৎসব আরম্ভ হ’ল ! এখন আর আমাদের এ মলিন মুখ শোভা পায় না ; এসো আমরাও এ উৎসবে যোগ দিই। নীরদ । ই চল । একটা গান গাই । আমার বড়ো ইচ্ছে এখনি একবার নলিনী এসে তোমাকে দেখে! তোমার সঙ্গে তার কতখানি প্ৰভেদ ! সে গাছের ফুল, আর তুমি গাছের ছায়া ! সে দু দণ্ডের শোভা, আর তুমি চিরকালের আশ্রয় । নীরজা । দেখ দেখ, ছায়ার মতো শীর্ণ মলিন ও রমণী কে ? নীরদ । (চমকিয়া) তাই তো, ও কে ? নীরদ । এ কি নলিনী, না নলিনীর স্বপ্ন ? 鸭 নীরজা । (নলিনীর কাছে গিয়া) তুমি কাদের বাছা! গা ? আজি এ উৎসবের দিনে তোমার মুখখানি অমন মলিন কেন ? নলিনী । আমি নলিনী । নীরজা। (সচকিতে) তােমার নাম নলিনী ? नलिनी । ई । নীরজা । (স্বগত) আহা, এর মুখখানি কী হয়ে গেছে ! নলিনী, আমি তোর মনের দুঃখ বুঝেছি। ! তাকে একবার এর কাছে ডেকে নিয়ে আসি ! ফুলির প্রবেশ ফুলি । (দ্রুতবেগে আসিয়া) কাকা, কাকা । নীরদ । (বুকে টানিয়া লইয়া) মা আমার, বাছা আমার ! ফুলি । এত দিন কোথায় ছিলে কাক ? নীরদ । সে কথা আর জিজ্ঞাসা করিস নে ফুলি ! আবার আমি তোদের কাছে এসেছি, আর আমি তোদের ছেড়ে কোথাও যাব না ! ফুলি। কাকা, একবার দিদির কাছে চল । नैदान । एकन यूलि ? ফুলি। একবার দেখসে দিদি কী হয়ে গেছে! নবীনের প্রবেশ নবীন । এই যে নীরদ, এসেছ ? আমরা সব স্বার্থপর কি অন্ধ হয়েই ছিলেম নীরদ ! একবার নলিনীর কাছে চল ।