পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ । ( মেয়েদের ছাড়িয়ে যেতে চেয়েছিল। তা ছাড়া আজকাল উলটাে প্রগতির কথা সে ক্রমাগত শুনে আসছে যে, মেয়েরা পুরুষের জন্য ত্যাগ করবে আপনাকে এইটাই হচ্ছে বিধাতার বিধান। পুরুষের জন্য যে মেয়ে আপনাকে না উৎসর্গ করে সে মেয়েই নয়। এই সমস্ত মত তাকে পেয়ে বসল। কলকাতায় যে বাসা সে ভাড়া করল খুব অল্প ভাড়ায়— সঁ্যাৎসেতে, রোগের আড়া। তার ছাদে বের হবার জো নেই, কলতলায় কেবলই জল গড়িয়ে পড়ছে। তার উপরে যা কখনো জীবনে করে নি তাই করতে হল- নিজের হাতে রান্না করতে আরম্ভ করল। অনেক বিদ্যে তার জানা ছিল, কিন্তু রান্নার বিদ্যে সে কখনো শেখে নি। যে অখাদ্য অপথ্য তৈরি হত, তা দিয়ে জোর করে পেট ভরাত । কিন্তু স্বাস্থ্য একেবারে ভেঙে পড়ল। মাঝে মাঝে কাজ কামাই করতে বাধ্য হল ডাক্তারের সাটিফিকেট নিয়ে। এত ঘন ঘন ফাক পড়ত কাজে যে অধ্যক্ষরা তাকে আর ছুটি মঞ্জুর করতে পারলেন না। তখন ধরা পড়ল ভিতরে ভিতরে তাকে ক্ষয়রোগে ধরেছে। বাসা থেকে তাকে সরানো দরকার, আত্মীয়-স্বজনরা মিলে তঁকে একটা প্রাইভেট হাসপাতালে ভরতি করে দিলে। কেউ জানত না কিছু | টাকা তার গোপনে সঞ্চিত ছিল, সেই টাকা থেকেই তার বরাদ-মতন দেয় নীহারের কাছে গিয়ে পীেছত। নীহার সব অবস্থাই জানত, তবু তার প্রাপ্য বলে এই টাকা সে অনায়াসে হাত পেতে নিতে লাগল। অথচ একদিন হাসপাতালে সুরীতিকে দেখতে যাবার অবকাশ সে পেত না। সুরীতি উৎসুক হয়ে থাকত জানলার দিকে কান পেতে, কিন্তু কোনো পরিচিত পায়ের ধ্বনি কোনোদিন কানে এল না । অবশেষে একদিন তার টাকার থলি নিঃশেষে শেষ হয়ে গেল আর সেইসঙ্গে তার চরম আত্মনিবেদন । ১১-২১ জুন ১৯৪১ - - আশ্বিন ১৩৪৮ শেষ পুরস্কার খসডা সেদিন আই. এ. এবং ম্যাট্রিক ক্লাসের পুরস্কার বিতরণের উৎসব। বিমলা বলে এক ছাত্রী ছিল, সুন্দরী বলে তার খ্যাতি। তারই হাতে পুরস্কারের ভার। চার দিকে তার ভিড় জমেছে আর তার মনে । অহংকার জমে উঠেছে খুব প্রচুর পরিমাণে । একটি মুখচােরা ভালোমানুষ ছেলে কোণে দাড়িয়ে ছিল। সাহস করে একটু কাছে এল যেই, দেখা গেল তার পয়ে হয়েছে ঘা, ময়লা কাপড়ের ব্যান্ডেজ জড়ানো। তাকে দেখে বিমলা নাক তুলে বললে, “ও এখানে কেন বাপু, ওর যাওয়া উচিত হাসপাতালে ।” ছেলেটি মন-মরা হয়ে আস্তে আস্তে চলে গেল। বাড়িতে গিয়ে তার স্কুলঘরের কোণে বসে কাদছে, জলখাবারের থালা হাতে তার দিদি এসে বললে, “ও কী হচ্ছে জগদীশ, কাদছিস কেন ।” তখন তার অপমানের কথা শুনে মৃণালিনী রাগে জ্বলে উঠল ; বললে, “ওর বড়ো রূপের অহংকার, একদিন ঐ মেয়ে যদি তোর এই পায়ের তলায় এসে না বসে তা হলে আমার নাম মৃণালিনী নয়।” এই গেল ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়। দিদি এখন ইনস্পেকট্রেস অব স্কুলস। এসেছেন পরিদর্শন করতে । তিনি তার ভাইয়ের এই দুঃখের কাহিনী মেয়েদের শোনালেন। শুনে মেয়েরা ছিছি। করে উঠল ; বললে, কোনাে মেয়ে কখনাে এমন নিষ্ঠুর কাজ করতে পারে না- তা সে যত বড়ো রূপসীই (२-श्नों (कम ।