পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্দশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

br8 রবীন্দ্র-রচনাবলী দুঃখ হউক, দারিদ্র্যই বা হউক, কখনো সেটি ত্যাগ করবেন না, চিরকাল বক্ষের মধ্যে লুকাইয়া রাখিবেন- মনে করিয়াছিলেন, এই অঙ্গুরীয়কটি র্তাহার চিন্তানলের সঙ্গী হইবে- কিন্তু অশ্রুময়নেত্রে তাহাও বাহির করিলেন । সে অঙ্গুরীটিও যখন তিনি বিক্রয় করিতে চাহিয়াছিলেন, তখন তিনি তাহার বুকের এক-একখানি DBDDgD DBB BD BBBS DD SDBD DB uDD DS অবশেষে বিধবা দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা চাহিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। একদিন গেল, দুইদিন গেল, তিনদিন যায়, কিন্তু নির্দিষ্ট অর্থের অর্ধেকও সংগৃহীত হয় নাই। আজ সেই দুস্য আসিবে। আজ যদি তাহার হস্তে অর্থ দিতে না পারেন, তবে বিধবার সংসারের যে একমাত্র বন্ধন আছে তাহাও ছিন্ন হইবে । কিন্তু অর্থ পাইলেন না । ভিক্ষা করিলেন, দ্বারে দ্বারে রোদন করিলেন, সম্পদের সময় যাহারা র্তাহার স্বামীর সামান্য অনুচর ছিল তাহদের নিকটও অঞ্চল পাতিলেন- কিন্তু নির্দিষ্ট অর্থের অর্ধেকও সংগৃহীত হইল না। ভয়বিহবল কমল গুহার কারাগারে কঁাদিয়া কঁাদিয়া সারা হইল। সে ভাবিতেছে তাহার অমরসিংহ থাকিলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটিত না । অমরসিংহ যদিও বালক, কিন্তু সে জানিত অমরসিংহ সকলই করিতে পারে। দসু্যরা তাহাকে মাঝে মাঝে ভয় দেখাইয়া যায়। দসু্যদের দেখিলেই সে ভয়ে অঞ্চলে মুখ ঢাকিয়া ফেলিত । এই অন্ধকার কারাগৃহে, এই নিষ্ঠুর দাসুদিগের মধ্যে একজন যুবা ছিল। সে কমলের প্রতি তেমন কৰ্কশভাবে ব্যবহার করিত না । সে ব্যাকুল বালিকাকে মেহের সহিত কত কী কথা জিজ্ঞাসা করিত, কিন্তু কমল ভয়ে কোনো কথারই উত্তর দিত না, দুস্য কাছে সরিয়া বসিলে সে ভয়ে আড়ষ্ট হইয়া যাইত। ঐ যুবাটি দাসুপতির পুত্র। সে একবার কমলকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল যে, দসু্যর সহিত বিবাহ করিতে কি তাহার কোনো আপত্তি আছে। এবং মাঝে মাঝে প্রলোভন দেখাইত যে, যদি কমল তাহাকে বিবাহ করে তবে সে তাহাকে মৃত্যুমুখ হইতে রক্ষা করবে। কিন্তু ভীরু কমল কোনো কথারই উত্তর দিত না । একদিন গেল ও দুইদিন গেল, বালিকা সভয়ে দেখিল দসু্যরা মদ্যপান করিয়া ছুরিকা শানাইতেছে। f এ দিকে বিধবার গৃহে দসু্যদের দূত প্রবেশ করিল, বিধবাকে জিজ্ঞাসা করিল অর্থ কোথায় ? বিধবা ভিক্ষা করিয়া যাহা-কিছু অর্থ সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন সকলই দাসুর পদতলে রাখিয়া কহিলেন, “আমার আর কিছুই নাই, যাহা-কিছু ছিল সকলই দিলাম, এখন তোমাদের কাছে ভিক্ষা চাহিতেছি আমার কমলকে আনিয়া দেও৷ ” p দসু্য সে মুদ্রগুলি সক্রোধে ছড়াইয়া ফেলিল। কহিল, “মিথ্যা প্রতারণা করিয়া পাের পাইবি না, নির্দিষ্ট অর্থ না দিলে নিশ্চয় আজি তোর কন্যা হত হইবে । তবে চলিলাম- আমাদের দলপতিকে বলিয়া আসি যে, নির্দিষ্ট অর্থ পাইবে না, তবে এখন নরশোণিতে মহাকালীর পূজা দেও।” বিধবা কত মিনতি করিলেন, কত কঁদিলেন, কিছুতেই দ্যসূত্র পাষাণহৃদয় গলাইতে পারিলেন না। দসু্য গমনোদ্যত হইলে কহিলেন, “যাইয়ো না, আর একটু অপেক্ষা করো, আমি আর একবার চেষ্টা করিয়া দেখি।” এই বলিয়া বাহির হইয়া গেলেন । চতুর্থ পরিচ্ছেদ মোহনলালের সহিত কমলের বিবাহের প্রস্তাব হয় । কিন্তু তাহা সম্পন্ন না হওয়াতে মোহন মনে-মনে কিছু ক্রুদ্ধ হইয়া আছে। কমলের সমুদয় বৃত্তান্ত মোহনলাল প্রাতেই শুনিতে পাইয়াছিলেন এবং তৎক্ষণাৎ কুলপুরোহিতকে ডাকাইয়া শীঘ্ৰ বিবাহের উত্তম দিন আছে কি না জিজ্ঞাসা করিলেন। গ্রামের মধ্যে মােহনের ন্যায় ধনী আর কেহ ছিল না ; আকুল বিধবা অবশেষে তাহার বাটীতে