পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৭২ রবীন্দ্র-রচনাবলী স্বযমা। কখনো ভুলব না। পুরন্দর। প্রাণকে নারী পুর্ণতা দেয়, এইজম্ভেই নারী মৃত্যুকেও মহীয়ান করতে পারে, তোমার কাছে এই আমার শেষ কথা । দ্বিতীয় অঙ্ক প্রথম দৃষ্ঠা চৌরঙ্গি-অঞ্চলে বাশারদের বাড়ি। ক্ষিতীশ ও বাঁশরি ক্ষিতীশ । তোমার হিন্দুস্থানী শোফারটা ভোরবেলা মুহুমুহু বাজাতে লাগল গাড়ির ভেঁপু। চেনা আওয়াজ, ধড় ফড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লুম। বঁাশরি। ভোরবেলায় ? অর্থাৎ ? ক্ষিতীশ । অর্থাৎ আটটার কম হবে না। বঁাশরি। অকালবোধন । ক্ষিতীশ । দুঃখ নেই, তবু জানতে চাই কারণটা । কোনো কারণ না থাকলেও নালিশ করব না। বঁাশরি। বুঝিয়ে বলছি। লেখবার বেলার নলিনাক্ষের দল বলে যাদের দাগ। দিয়েছ তাদের সামনে এলেই দেখি তোমার মন যায় এতটুকু হয়ে। মনে মনে চেচিয়ে নিজেকে বোঝাতে থাক— ওরা তো ডেকোরেটেড ফুলস্ । কিন্তু, সেই স্বগতোক্তিতে সংকোচ চাপা পড়ে না । সাহিত্যিক আভিজাত্যবোধকে অস্তরের মধ্যে ফঁাপিয়ে তোল তবু নিজেকে ওদের সমান বহরে দাড় করাতে পার না। সেই চিত্তবিক্ষেপ থেকে বাচাবার জন্য নলিনাক্ষ-দলের দিন আরম্ভ হবার পূর্বেই তোমাকে ডাকিয়েছি । সকালবেলায় অন্তত নটা পর্যন্ত আমাদের এখানে রাতের উত্তরাকাও । আপাতত এ বাড়িটা সাহারা মরুভূমির মতো নির্জন । ; ক্ষিতীশ । ওয়েসিস দেখতে পাচ্ছি এই ঘরটার সীমানায় । বঁাশরি। ওগো পথিক, ওয়েসিস নয়, ভালো করে যখন চিনবে তখন বুঝবে, মরীচিকা । ক্ষিতীশ । আমার মাথায় আরও উপমা আসছে বঁাশি, আজ তোমার সকালবেলাকার অসজ্জিত রূপ দেখাচ্ছে যেন সকালবেলাকার অলস চাদের মতো ।