পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

बैंऑिब्रेि : ১৭৩ বঁাশরি। দোহাই তোমার, গদগদ ভাবটা রেখে দিয়ে একলা-ঘরের বিজনবিরহের জন্ত । মুগ্ধ দৃষ্টি তোমাকে মানায় না। কাজের জন্ত ডেকেছি, বাজে কথা স্ট্রিক্টলি প্রোহিবিটেড । ক্ষিতীশ । এর থেকে ভাষার রেলেটিভিটি প্রমাণ হয় । আমার পক্ষে যা মর্মান্তিক জরুরি তোমার পক্ষে তা বোটিয়ে-ফেলা বাজে । বঁাশরি। আজ সকালে এই আমার শেষ অনুরোধ, গাজিয়ে-ওঠা রসের ফেন৷ দিয়ে তাড়িখানা বানিয়ো না নিজের ব্যবহারটাকে । আর্টিস্টের দায়িত্ব তোমার । ক্ষিতীশ । আচ্ছ, তবে মেনে নিলুম দায়িত্ব । বঁাশরি। সাহিত্যিক, হতাশ হয়ে পড়েছি তোমার অসাড়তা দেখে। নিজের চক্ষে দেখলে একটা আসন্ন ট্র্যাজেডির সংকেত— আগুনের সাপ ফণা ধরেছে— এখনও চেতিয়ে উঠল না তোমার কলম, আমার তো কাল সারারাত্রি ঘুম হল না। এমন লেখা লেখবার শক্তি কেন আমাকে দিলেন না বিধাতা, যার অক্ষরে অক্ষরে ফেটে পড়ত রক্তবর্ণ আগুনের ফোয়ার। দেখতে পাচ্ছি আর্টিস্টের চোখে, বলতে পারছি নে আর্টিস্টের কণ্ঠে । ব্ৰহ্ম। যদি বোবা হতেন তা হলে অম্বষ্ট বিশ্বের ব্যথায় মহাকাশের বুক যেত ফেটে । ক্ষিতীশ । কে বলে তুমি প্রকাশ করতে পার না বাশি, তুমি নও আর্টিস্ট ! তুমি যেন হীরেমুক্তোর হরির লুঠ দিচ্ছ। কথায় কথায় তোমার শক্তির প্রমাণ ছড়াছড়ি যায়, দেখে ঈৰ্ষা হয় মনে । বঁাশরি। আমি যে মেয়ে, আমার প্রকাশ ব্যক্তিগত । বলবার লোককে প্রত্যক্ষ পেলে তবেই বলতে পারি। কেউ নেই তবু বল— সেই বলা তো চিরকালের । আমাদের বলা নগদ বিদায়, হাতে হাতে, দিনে দিনে। ঘরে ঘরে মুহূর্তে মুহূর্তে সেগুলো ওঠে আর মেলায় । ক্ষিতীশ । পুরুষ আর্টিস্ট কে এবার মেরেছ ঠেলা, আচ্ছা বেশ, কাজ আরম্ভ হোক । সেদিন বলেছিলে একটা চিঠির কথা । বঁাশরি। এই সেই চিঠি। সন্ন্যাসী বলছেন– প্রেমে মানুষের মুক্তি সর্বত্র । কবির যাকে বলে ভালোবাসা সেইটাই বন্ধন। তাতে একজন মাস্থ্যকেই আসক্তির দ্বারা ঘিরে নিবিড় স্বাতন্ত্র্যে অতিক্ত করে। প্রকৃতি রঙিন মদ ঢেলে দেয় দেহের পাত্রে, তাতে যে মাংলামি তীব্র হয়ে ওঠে তাকে অপ্ৰমত্ত সত্যবোধের চেয়ে বেশি সত্য বলে ভূল হয়। খাচাকেও পাখি ভালোবাসে যদি তাকে আফিমের নেশার বশ করা যায়। সংসারের যত দুঃখ, যত বিরোধ, যত বিকৃতি সেই মায়া নিয়ে যাতে