পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঁশিরি ; · ゞbや চিরচিতানলের শ্মশান । কখনও এমন বিচলিত দশা হয় নি আমার । আজ কেন এল বস্তার মতো এই পাগলামি । লজ্জা ! লজ্জা ! লজ্জা ! তোমাদের তিনজনের সামনে এই অপমান ! থামো সোমশংকর, আমাকে দয়া করতে এসো না। মুছে ফেলব এই অপমান, কোনো চিহ্ন থাকবে না এর কাল। এই আমি বলে গেলুম। [ বঁাশরি ও সুষমার প্রস্থান পুরন্দর । সোমশংকর, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি। সোমশংকর। বলুন। o পুরন্দর। যে-ব্রত তুমি স্বীকার করেছ তা সম্পূর্ণই তোমার আপন হয়েছে কি। তার ক্রিয়া চলেছে তোমার প্রাণপ্রিয়ার সঙ্গে ? সোমশংকর। কেন সন্দেহ বোধ করছেন। পুরন্দর। আমার প্রতি ভক্তিতেই যদি এই সংকল্প গ্রহণ করে থাক তবে এখনই ফেলে দাও এই বোঝা । সোমশংকর। এমন কথা কেন বলছেন আজ। আমার মধ্যে দুর্বলতার লক্ষণ কিছু দেখছেন কি । পুরন্দর। মোহিনী শক্তি আছে আমার, এমন কথা কেউ কেউ বলে— শুনে লজ্জা পাই ; জাদুকর নই আমি । সোমশংকর। আত্মার ক্রিয়াকে যারা বিশ্বাস করে না তারা তাকে বলে জাদুর ক্রিয়া । পুরন্দর । ব্রতের মাহাত্ম্য তার স্বাধীনতায় । যদি ভুলিয়ে থাকি তোমাকে, সে-ভুল ভাঙতে হবে । গুরুবাক্য বিষ— সে-বাক্য যদি তোমার নিজের বাক্য না হয়। সোমশংকর। সন্ন্যাসী, যে-ব্রত নিয়েছি সে আজ আমার রক্তে বইছে তেজরূপে, জলছে বুকের মধ্যে হোমাগ্নির মতো। মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়েছি, আজ আমার দ্বিধা কোথায় । পুরন্দর। এই কথাই শুনতে চেয়েছিলুম তোমার মুখ থেকে। আর-একটি কথা বাকি আছে। কেউ কেউ প্রশ্ন করে, কেন সুষমার বিবাহ দিলুম তোমার সঙ্গে। তোমারই কাছ থেকে আমি তার উত্তর চাই। সোমশংকর। এতদিনের তপস্যায় এই নারীর চিত্তকে তুমি যজ্ঞের অগ্নিশিখার মতো উর্ধ্বে জালিয়ে তুলেছ, আমারই পরে ভার দিলে এই অনির্বাণ অগ্নিকে চিরদিন রক্ষা করতে । * পুরন্দর। বৎস, যতদিন রক্ষা করবে তার দ্বারা তুমি আপনাকেই রক্ষা করতে