পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*१११ রবীক্স-রচনাবলী ফেলা হয়। তারা বাগানের শোঁথিম গাছ নয়, তাদের মালিশ শোনবার কেউ নেই। এক-একদিন ওর কাফির কোলে এলে বসে তার গলা জড়িয়ে বলে, “ওই ঘাশিয়াড়াকে বলো-না, আমার ওই গাছগুলো যেন না কাটে।” so কাকি বলে, “বলাই, কী যে পাগলের মতো বকিস । ও যে সব জঙ্গল, সাফ না করলে চলরে কেন ।” বলাই অনেকদিন থেকে বুঝতে পেরেছিল, কতকগুলো ব্যথা আছে যা সম্পূর্ণ ওর একলারই— ওর চার দিকের লোকের মধ্যে তার কোনো সাড়া নেই। এই ছেলের আসল বয়স সেই কোটি বৎসর আগেকার দিনে, যেদিন সমুঞ্জের গর্ভ থেকে নতুন-জাগা পদ্ধস্তরের মধ্যে পৃথিবীর ভাবী অরণ্য আপনার জন্মের প্রথম ক্ৰন্দন উঠিয়েছে—সেদিন পশু নেই, পাখি নেই, জীবনের কলরব নেই, চার দিকে পাথর আর পাক আর জল । কালের পথে সমস্ত জীবের অগ্রগামী গাছ, সূর্যের দিকে জোড় হাত তুলে বলেছে, “আমি থাকব, আমি র্যাচব, আমি চিরপথিক, মৃত্যুর পর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অন্তহীন প্রাণের বিকাশতীর্থে যাত্রা করব রৌদ্রে-বাদলে, দিনে-রাত্রে।’ গাছের সেই রব আজও উঠছে বনে বনে, পর্বতে প্রাস্তরে, তাদেরই শাখায় পত্রে ধরণীর প্রাণ বলে বলে উঠছে, ‘আমি থাকব, আমি থাকব। বিশ্বপ্রাণের মূক ধাত্রী এই গাছ নিরবচ্ছিন্ন কাল ধরে দু্যলোককে দোহন করে ; পৃথিবীর অমৃতভাণ্ডারের জন্তে প্রাণের তেজ, প্রাণের রস, প্রাণের লাবণ্য সঞ্চয় করে ; আর উৎকণ্ঠিত প্রাণের বাণীকে অহৰ্নিশি আকাশে উচ্ছসিত করে তোলে, “আমি থাকব ।’ সেই বিশ্বপ্রাণের বাণী কেমন-একরকম করে আপনার রক্তের মধ্যে শুনতে পেয়েছিল ওই বলাই। আমরা তাই নিয়ে খুব হেসেছিলুম। একদিন সকালে একমনে খবরের কাগজ পড়ছি, বলাই আমাকে ব্যস্ত করে ধরে নিয়ে গেল বাগানে। এক জায়গায় একটা চারা দেখিয়ে অামকে জিজ্ঞাসা করলে, “কাকা, এ গাছটা কী ।” দেখলুম একটা শিমুলগাছের চারা বাগানের খোওয়া-দেওয়া রাস্তার মাঝখানেই উঠেছে । হাঙ্ক রে, বলাই ভুল করেছিল আমাকে তেকে নিয়ে এসে । এতটুকু স্থখন এর অঙ্কুর বেরিয়েছিল, শিশুর প্রথম প্ৰলাপটুকুর মতো, তখনই এটা বলাইয়ের চোখে পড়েছে। তার পর থেকে বলাই প্রতিদিন নিজের হাতে একটু একটু জল দিয়েছে, সকালে বিকেলে ক্রমাগতই ব্যগ্র হয়ে দেখেছে কতটুকু বাড়ল । শিমুলগাছ বাড়েও