পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ઉ જ রবীন্দ্র-রচনাবলী থাকত তার আরোগ্যবিধান । কিন্তু যেহেতু জীবনযাত্রার সভ্য আদর্শ বজায় রাখবার পক্ষে এ-সকল অভাব একেবারেই মারাত্মক, এইজন্তে পাওনাদারকে এমন কথা বলতে শুনলুম যে আমরা দেনাশোধ করব না। সভ্যতার দোহাই দিয়ে ভারতবর্ষ কি এমন কথা বলতে পারে না যে, এই প্রাণ-দেউলে-করা তোমাদের ছ...ল্য শাসনতন্ত্রের এত অসহ দেন। আমরা বহন করতে পারব না যাতে বর্ধরদশার জগদ্দল পাথর চিরদিনের মতো দেশের বুকের উপর চেপে থাকে। বর্তমান যুগে যুরোপ ষে-সভ্যতার আদর্শকে উদ্ভাবিত করেছে যুরোপই কি স্বহস্তে তার দাবিকে ভূমণ্ডলের পশ্চিম সীমানাতেই আবদ্ধ করে রাখবে। সর্বজনের সর্বকালের কাছে সেই সভ্যতার মহৎ দায়িত্ব কি যুরোপের নেই। ক্রমে ক্রমে দেখা গেল যুরোপের বাইরে অনাত্মীয়মগুলে যুরোপীয় সভ্যতার মশালাট আলো দেখাবার জন্তে নয়, আগুন লাগাবার জন্তে । তাই একদিন কামানের গোলা আর আফিমের পিণ্ড একসঙ্গে বর্ষিত হল চীনের মর্মস্থানের উপর । ইতিহাসে আজ পর্যন্ত এমন সর্বনাশ আর কোনোদিন কোথাও হয় নি— এক হয়েছিল যুরোপীয় সভ্যজাতি যখন নবাবিষ্কৃত আমেরিকায় স্বর্ণপিণ্ডের লোভে ছলে বলে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করে দিয়েছে 'মায়া জাতির অপূর্ব সভ্যতাকে । মধ্যযুগে অসভ্য তাতার বিজিত দেশে নরমুণ্ডের স্তৃপ উচু করে তুলেছিল ; তার বেদন অনতিকাল পরে লুপ্ত হয়েছে। সভ্য যুরোপ চীনের মতো এত বড়ো দেশকে জোর করে যে বিষ গিলিয়েছে, তাতে চিরকালের মতো তার মজা জর্জরিত হয়ে গেল । একদিন তরুণ পারসিকের দল দীর্ঘকালের অসাড়তার জাল থেকে পারস্তকে উদ্ধার করবার জন্তে যখন প্রাণপণ করে দাড়িয়েছিল, তখন সভ্য যুরোপ কী রকম করে দুই হাতে তার টুটি চেপে ধরেছিল, সেই অমার্জনীয় শোকাবহ ব্যাপার জানা যায় পারস্তের তদানীন্তন পরাহত আমেরিকান রাজস্বসচিব শুস্টারের Strangling of Persia বইখানা পড়লে । ও দিকে আফ্রিকার কনগো প্রদেশে যুরোপীয় শাসন যে কী রকম অকথ্য বিভীষিকায় পরিণত হয়েছিল সে সকলেরই জানা। আজও আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে নিগ্রোজাতি সামাজিক অসম্মানে লাঞ্ছিত, এবং সেই-জাতীয় কোনো হতভাগ্যকে যখন জীবিত অবস্থায় দাহ করা হয়, তখন শ্বেতচর্মী নরনারীরা সেই পাশব দৃশু উপভোগ করবার জন্তে ভিড় করে আসে । তার পরে মহাযুদ্ধ এসে অকস্মাৎ পাশ্চাত্য ইতিহাসের একটা পর্দা তুলে দিলে। যেন কোন মাতালের আক্ৰ গেল ঘুচে । এত মিথ্যা এত বীভৎস হিংস্রতা নিবিড় হয়ে বহু পূৰ্বকার অন্ধ যুগে ক্ষণকালের জন্তে হয়তো মাঝে মাঝে উৎপাত করেছে, কিন্তু