পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালাস্তর , । २¢¢ তাহারই স্তবের বুলি পড়িয়া পড়িয়া আমরা অম্ভ সকল গান ভুলিয়াছি, কেননা অস্তথা করিলে বিপদের অস্ত নাই। আমাদের এখানে সকল দিকেই ঐ কামারেরই হইল জয়, আর সব-চেয়ে বিড়ম্বিত হইলেন বিধাতা, যিনি আমাদিগকে কর্মশক্তি দিয়াছেন, যিনি মানুষ বলিয়া আমাদিগকে বুদ্ধি দিয়া গৌরবান্বিত করিয়াছেন। র্যাহারা বলিতেছেন যেখানে যাহা আছে সমস্তই বজায় থাকৃ, তাহারা সকলেই আমাদের প্রণম্য— কারণ, তাহাদের বয়স অল্পই হউক আর বেশিই হউক তাহারা সকলেই প্রবীণ। সংসারে তাহাদের প্রয়োজন আমরা অস্বীকার করি না । পৃথিবীতে এমন সমাজ নাই যেখানে তাহারা দণ্ড ধরিয়া বসিয়া নাই। কিন্তু বিধাতার বরে যে-সমাজ বাচিয়া থাকিবে সে-সমাজে তাহাদের দগুই চরম বলিয়া মান পায় না । সেদিন একটি কুকুরছানাকে দেখা গেল, মাটির উপর দিয়া একটি কীট চলিতেছে দেখিয়া তাহার ভারি কৌতুহল । সে তাহাকে শুকিতে শুকিতে তাহার অনুসরণ করিয়া চলিল। যেমনি পোকাটা একটু ধড়ফড় করিয়া উঠিতেছে অমনি কুকুরশাবক চমকিয়া পিছাইয়া আসিতেছে। দেখা গেল তাহার মধ্যে নিষেধ এবং তাগিদ দুটা জিনিসই আছে। প্রাণের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি এই ষে, সমস্তকেই সে পরখ করিয়া দেখে। নূতন নূতন অভিজ্ঞতার পথ ধরিয়া সে আপনার অধিকার বিস্তার করিয়া চলিতে চায়। প্রাণ দুঃসাহসিক— বিপদের ঠোকর খাইলেও সে আপনার জয়যাত্রার পথ হইতে সম্পূর্ণ নিরস্ত হইতে চায় না। কিন্তু তাহার মধ্যে একটি প্রবীণও আছে, বাধার বিকট চেহারা দেখিবা মাত্রই সে বলে, কাজ কী। বহু পুরাতন যুগ হইতে পুরুষানুক্রমে যত-কিছু বিপদের তাড়না আপনার ভয়ের সংবাদ রাখিয়া গিয়াছে তাহাকে পুথির আকারে বাধাইয়া রাখিয়া একটি বৃদ্ধ তাহারই খবরদারি করিতেছে। নবীন প্রাণ এবং প্রবীণ ভয়, জীবের মধ্যে উভয়েই কাজ করিতেছে। ভয় বলিতেছে, রোসো রোসো, প্রাণ বলিতেছে, ‘দেখাই যাক না । অতএব এই প্রবীণতার বিরুদ্ধে আমরা আপত্তি করিবার কে । আপত্তি করিও না। তাহার বৈঠকে তিনি গদিয়ান হইয়া থাকিবেন, সেখান হইতে র্তাহাকে আমরা নড়িয়া বসিতে বলি এমন বেআদব আমরা নই। কিন্তু প্রাণের রাজ্যে র্তাহাকেই একেশ্বর করিবার যখন ষড়যন্ত্র হয় তখনই বিদ্রোহের ধ্বজ তুলিয়া বাহির হইবার দিন আসে । দুর্ভাবনা এবং নির্ভাবনা উভয়কেই আমরা খাতির করিয়া চলিতে রাজি আছি । প্রাণের রাজ্যাধিকারে এই উভয়েই শরিক বটে কিন্তু উভয়ের অংশ যে সমান