পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালান্তর ९७¢ এমনি করিয়া ধনের প্রকাও জালের মধ্যে আটকা পড়িয়া লোকসাধারণ ছটফট করিয়া উঠিয়াছে। ধনের চাপটা যদি এত জোরের সঙ্গে তাহাজের উপর না পড়িত তবে তাহারা জমাট বাধিত ন— এবং তাহারা যে, কেহ-বা কিছু তাহা কাহারও খবরে আসিত না। এখন ওদেশে লোকসাধারণ কেবল সেন্সস-রিপোর্টের তালিকাভূক্ত নহে ; সে একটা শক্তি । সে আর ভিক্ষা করে না, দাবি করে। এইজন্ত তাহার কথা দেশের লোকে আর ভুলিতে পারিতেছে না ; সকলকে সে বিষম ভাবাইয়। তুলিয়াছে। এই লইয়া পশ্চিমদেশে নিয়ত যে-সব আলোচনা চলিতেছে আমরা তাহাদের কাগজে পত্রে তাহ সর্বদাই পড়িতে পাই। ইহাতে হঠাৎ এক-একবার আমাদের ধর্মবুদ্ধি চমক খাইয় উঠে। বলে, তবে তো আমাদেরও ঠিক এই রকম আলোচনা কর্তব্য । ভুলিয়া যাই ওদেশে কেবলমাত্র আলোচনার নেশায় আলোচনা নহে, তাহা নিতান্তই প্রাণের দায়ে । এই আলোচনার পশ্চাতে নানা বোঝাপড়া, নানা উপায়অন্বেষণ আছে। কারণ সেখানে শক্তির সঙ্গে শক্তির লড়াই চলিতেছে— যাহারা অক্ষমকে অনুগ্রহ করিয়া চিত্তবিনোদন ও অবকাশযাপন করিতে চায় এ তাহাদের সেই বিলাসকলা নহে । আমাদের দেশে লোকসাধারণ এখনো নিজেকে লোক বলিয়া জানে না, সেইজন্য জানান দিতেও পারে না। আমরা তাহাদিগকে ইংরেজি বই পড়িয়া জানিব এবং অনুগ্রহ করিয়া জানিব, সে জানায় তাহারা কোনো জোর পায় না, ফলও পায় না। তাহাদের নিজের অভাব ও বেদনা তাহাদের নিজের কাছে বিচ্ছিন্ন ও ব্যক্তিগত । তাহাদের একলার দুঃখ যে একটি বিরাট দুঃখের অন্তর্গত এইটি জানিতে পারিলে তবে তাহাদের দুঃখ সমস্ত সমাজের পক্ষে একটি সমস্ত হইয়া দাড়াইত। তখন সমাজ, দয়া করিয়া নহে, নিজের গরজে সেই সমস্যার মীমাংসায় লাগিয়া যাইত। পরের ভাবনা ভাবা তখনই সত্য হয়, পর যখন আমাদিগকে ভাবাইয়া তোলে। অনুগ্রহ করিয়া ভাবিতে গেলে কথায় কথায় অন্যমনস্ক হইতে হয় এবং ভাবনাটা নিজের দিকেই বেশি করিয়া বোকে । সাহিত্য সম্বন্ধেও এই কথা খাটে। আমরা যদি আপনার উচ্চতার অভিমানে পুলকিত হইয়া মনে করি যে, ঐ-সব সাধারণ লোকদের জন্ত আমরা লোকসাহিত্য স্থষ্টি করিব তবে এমন জিনিসের আমদানি করিব যাহাকে বিদায় করিবার জম্ভ দেশে ভাঙা কুল ছফ্ল্য হইয় উঠবে। ইহা আমাদের ক্ষমতায় নাই। আমরা যেমন