পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&br、 রবীন্দ্র-রচনাবলী যে, স্বজাতির যিনি দেবতা সর্বজাতির দেবতাই তিনি, এইজষ্ঠ তাহার পূজায় নরবলি জানিলে একদিন রুত্ৰ তার প্রলয়রূপ ধারণ করেন। আজ যদি সে না-ও বুঝিয়া থাকে, একদিন সে বুঝিবেই যে, হাওয়া যেখানেই পাতলা, ঝড়ের কেন্দ্রই সে জায়গাটায়— কেননা চারি দিকের মোটা হাওয়া সেই কাক দখল করিতেই কিয় পড়ে। তেমনি পৃথিবীর যে-সব দেশ দুর্বল, সবলের দ্বন্ধের কারণ সেখানেই ; লোভের ক্ষেত্র সেখানেই ; মাহুষ সেখানে আপন মহৎস্বরূপে বিরাজ করে না ; মাস্থ্য প্রত্যহই সেখানে অসতর্ক হইয়া আপন মনুষ্যত্বকে শিথিল করিয়া বর্জন করিতে থাকে। শয়তান সেখানে আসন জুড়িয়া ভগবানকে দুর্বল বলিয়া বিদ্রুপ করে। বড়ো-ইংরেজ এ কথা বুঝিবেই যে, বালির উপর বাড়ি করা চলে না, একের শক্তিহীনতার উপরে অপরের শক্তির ভিত্তি কখনই পাকা হইতে পারে না । কিন্তু ছোটো-ইংরেজ অগ্রসর হইয়া চলে না। যে-দেশকে সে নিশ্চল করিয়া বঁাধিয়াছে, শতাব্দীর পর শতাব্দী সেই দেশের সঙ্গে সে আপনি বাধা । তার জীবনের এক পিঠে আপিস, আরেক পিঠে আমোদ । যে-পিঠে আপিস সে-পিঠে সে ভারতের বহুকোটি মানুষকে রাষ্ট্রকের রাজদণ্ডের বা বণিকের মানদণ্ডের ডগাটা দিয়া স্পর্শ করে, আর যে-পিঠে আমোদ সে-পিঠটা চাদের পশ্চাদিকের মতো, বৎসরের পর বৎসর সম্পূর্ণ অদৃশু। তবু কেবলমাত্র কালের অঙ্কপাত হিসাব করিয়া ইহারা অভিজ্ঞতার দাবি করে। ভারত-অধিকারের গোড়ায় ইহারা স্বজনের কাজে রত ছিল, কিন্তু তাহার পর বহুদীর্ঘকাল ইহারা পাকা সাম্রাজ্য ও পাকা বাণিজ্যকে প্রধানত পাহারা দিতেছে ও ভোগ করিতেছে। নিরস্তর ক্ষটিনের ঘানি টানিয়া ইহারা বিষয়ীলোকদের পাক প্রকৃতি পাইয়াছে, সেই প্রকৃতি কঠিন অসাড়তাকেই বল বলিয়া থাকে। তারা মনে করে তাদের আপিসটা স্থনিয়মে চলিতেছে এইটেই বিশ্বের সব-চেয়ে বড়ো ঘটনা। কিন্তু আপিসের জালনার বাহিরে রাস্তার ধুলার উপর দিয়া বিশ্বদেবতা তার রথযাত্রায় অতিদীনকেও যে নিজের সারথ্যেই চালাইতেছেন এই চালনাকে তারা অশ্রদ্ধা করে। অক্ষমের সঙ্গে নিয়ত কারবার করিয়া এ কথা তারা ধ্রুব বলিয়া ধরিয়া লইয়াছে, যেমন তারা বর্তমানের মালিক তেমনি তারা ভবিষ্যতের নিয়ন্তা। আমরা এখানে আসিয়াছি এই কথা বলিয়াই তার চুপ করে না, আমরা এখানে থাকিবই এই কথা বলিয়া তার স্পধী করে । অতএব ওরে মরীচিকালুদ্ধ দুর্ভাগা, বড়ো-ইংরেজের কাছ হইতে জাহাজ বোঝাই করিয়া বর আসিতেছে কেবল এই আশাটাকে বুকে করিয়াই পশ্চিমের ঘাটের দিকে অতবেশি কলরব করিতে করিতে ছুটিয়ে না। এই আশঙ্কাটাকেও মনে রাখিয়ে ষে,