পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী به هم অতএব ভীরু ধর্মভাবুকের দল ষাকে অধৰ্ম বলে নিন্দ করে, সেই অধৰ্মই কৃতাৰ্থতার দিকে মানুষকে নিয়ে যায় । । জঙ্গল সে কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে না ; সমস্ত মেনে নিয়েই তারা বলে : অধৰ্মেণৈধতে তাবৎ ততো ভদ্রাণি পশুতি, ততঃ সপত্নান জয়তি সমূলত্ব বিনগুতি। । ঐশ্বর্যগর্বেও মানুষের মন বাহিরের দিকে বিক্ষিপ্ত হয়, আবার দারিত্র্যের দুঃখে ও অপমানেও মানুষের সমস্ত লোলুপ প্রবৃত্তি বাইরের দিকে ঝুকে পড়ে। এই দুই অবস্থাতেই মানুষ সকল দেবতার উপরে সেই শক্তিকে আসন দিতে লজ্জিত হয় না— যে ক্রুর শক্তির দক্ষিণহন্তে অম্ভায়ের এবং বামহস্তে ছলনার অস্ত্র। প্রতাপস্থরামত্ত যুরোপের পলিটিক্স, এই শক্তিপূজা। এইজন্ত সেখানকার ডিপ্লোমেসি কেবলই প্রকাশ্বতাকে এড়িয়ে চলতে চায় ; অর্থাৎ সেখানে শক্তি যে-মূর্তি ধারণ করেছে সে সম্পূর্ণ উলঙ্গমূর্তি নয় ; কিন্তু তার লেলিহান রসনার উলঙ্গত কোথাও ঢাকা নেই। ঐ দেখে পী"-কনফারেন্সের সভাক্ষেত্রে তা লক্লক করছে। অপরপক্ষে একদা আমাদের দেশে রাষ্ট্ৰীয় উচ্ছম্বলতার সময় ভীত পীড়িত প্রজা আপন কবিদের মুখ দিয়ে শক্তিরই স্তবগান করিয়েছে। কবিকঙ্কণচণ্ডী, অন্নদামঙ্গল, মনসার ভাসান, প্রকৃতপক্ষে অধর্মেরই জয়গান। সেই কাব্যে অন্তায়কারিণী ছলনাময়ী নিষ্ঠুর শক্তির হাতে শিব পরাভূত। অথচ অদ্ভুত ব্যাপার এই যে, এই পরাভবগানকেই মঙ্গলগান নাম দেওয়া হল । r আজকের দিনেও দেখি আমাদের দেশে সেই হাওয়া উঠেছে। আমরা ধর্মের নাম করেই একদল লোক বলছি, ধর্মভীরুতাও ভীরুতা ; বলছি, যারা বীর, অন্যায় তাদের পক্ষে অন্যায় নয়। তাই দেখি সাংসারিকতায় যারা কৃতাৰ্থ এবং সাংসারিকতায় যারা অকৃতাৰ্থ, দুইয়েরই স্থর এক জায়গায় এসে মেলে। ধর্মকে উভয়েই বাধা বলে জানে— সেই বাধা গায়ের জোরে অতিক্রম করতে চায়। কিন্তু গায়ের জোরই পৃথিবীতে সবচেয়ে বড়ো জোর নয়। এই বড়ো দুঃসময়ে কামনা করি শক্তির বীভৎসতাকে কিছুতে আমরা ভয়ও করব না, ভক্তিও করব না— তাকে উপেক্ষা করব, অবজ্ঞা করব । সেই মনুষ্যত্বের অভিমান আমাদের হোক, যে-অভিমানে মানুষ এই স্কুল বস্তুজগতের প্রবল প্রকাণ্ডতার মাঝখানে দাড়িয়ে মাথা তুলে বলতে পারে, আমার সম্পদ এখানে নয় ; বলতে পারে, শৃঙ্খলে আমি বন্দী হই নে, আঘাতে আমি আহত হই নে, মৃত্যুতে আমি মরি নে ; বলতে পারে, যেমাহং নাস্বতঃ তাম্ কিমহং তেন কুর্ষাম। আমাদের পিতামহের বলে গেছেন,