পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

, কালান্তর , , లas ভারতবর্ষ যেখানে তার মৈত্রীর সোনার কাঠি দিয়ে স্পর্শ করেছে সেখানেই শিল্পকলার কী প্রভূত ও পরমাশ্চর্ষ বিকাশ হয়েছে। শিল্পস্থষ্টিমহিমায় সে-সকল দেশ মহিমান্বিত হয়ে উঠেছে। অথচ সেখানকার লোকের সমজাতীয়দের দেখো, দেখবে তারা নরঘাতক, তারা শিল্পসম্পদহীন । এমন-সকল নিরালোক চিত্তে আলো জাললে দয়াধর্ম ত্যাগধর্ম মৈত্রীধর্মের মহতী বাণীর দ্বারা । সেখানকার লোকে সামান্ত বেশভূষা-ভাষার পরিবর্তনের দ্বারা স্বাতন্ত্র্য পেয়েছে তা নয় ; স্বষ্টি করবার স্বপ্ত শক্তি তাদের মধ্যে জাগ্রত হয়েছে— সে কী পরমাদ্ভূত স্থষ্টি । এই-সকল দ্বীপেরই আশে পাশে আরও তো অনেক দ্বীপ আছে, সেখানে আমরা বরবুদর’ দেখি নে কেন, সে-সব জায়গায় ‘আস্করবট’এর সমতুল্য বা সমজাতীয় কিছু নেই কেন । সত্যের জাগরণমন্ত্র ষে সেখানে পৌছায় নি। মানুষকে অনুকরণে প্রবৃত্ত করার মধ্যে গৌরব নেই, কিন্তু মান্বষের স্বপ্ত শক্তিকে মুক্তিদান করার মতো এতবড়ো গৌরবের কথা আর কি কিছু আছে। লোকে যখন দরিদ্র হয় তখন বাইরের দিকে গৌরব খুজে বেড়ায়। তখন কথা বলে গৌরব করতে চায়, তখন পুথি থেকে শ্লোক খুটে খুটে গৌরবের মালমসলা ভগ্নস্তৃপ থেকে সঞ্চয় করতে থাকে। এমনি করে সত্যকে ব্যবহার থেকে দূরে রেখে যদি গলার জোরে পুরাতন গৌরবের বড়াই করতে বসি তবে আমাদের ধিক । অহংকার করবার জষ্ঠে সত্যের ব্যবহার সত্যের অবমাননা । আমার মনের একান্তু প্রার্থনা এই যে, সত্যবাণীকে র্কাধে ঝুলিয়ে জয়ঢাক করে তাকে যেন বাজিয়ে না বেড়াই, বাইরের লোককে চমক লাগাবার জন্তে যেন তাকে অলংকার মাত্র না করি, যেন নিজেরই একান্ত আন্তরিক প্রয়োজনের জন্তেই তার সন্ধান ও সাধনা করতে পারি । জাভায় যখন যাব তখন মনকে অহংকারমুক্ত করে সত্যের অমৃতমস্ত্রের ক্রিয়াটি দেখে যেন নম্র হতে পারি। সেই মৈত্রীর মহামন্ত্রটি নিজের মধ্যেই পাওয়া চাই, তা হলেই আমার চিত্তে যেখানে অরণ্য সেখানে মন্দির উঠবে, যেখানে মরুভূমি সেখানে সৌন্দর্যের রসবৃষ্টি হবে, জীবনের তপস্তা জয়যুক্ত হয়ে সার্থক হয়ে উঠবে। 8סיס\b