পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\లిన్తe . রবীন্দ্র-রচনাবলী পৃথিবীর একাধকে ধর্মের আশ্রয় দান করেছেন তিনি আস্তাবলে নিরাশ্রয় দারিত্র্যের কোলে জন্মেছিলেন। পৃথিবীতে যা কিছু বড়ো ও সার্থক তার যে কত ছোটো জায়গায় জন্ম, কোন অজ্ঞাত লগ্নে যে তার সূত্রপাত, তা আমরা জানি নে— অনেক সময় মরে গিয়ে সে আপনার শক্তিকে প্রকাশমান করে। আমার এইটে বিশ্বাস যে, যে দরিদ্র সেই দারিদ্র্য জয় করবে— সেই বীরই সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনের বাহিরে জীর্ণ কন্থার পরে জন্মগ্রহণ করেছে। যে স্থতিকাগৃহের অন্ধকার কোণে জন্মেছে সেখানে আমরা প্রবেশ করে তাকে প্রত্যক্ষ করতে পারি নি, কিন্তু সেখানকার শঙ্খধ্বনি বাইরের বাতাসকে স্পন্দিত করে তুলেছে। আমরা তাকে চক্ষে দেখলুম না কিন্তু আমাদের এই আনন্দ যে, তার অভু্যদয় হয়েছে। আমাদের এই আনন্দ যে, আমরা তার সেবার অধিকারী। আমরা জোড়হাত করে তাকিয়ে আছি ; বলছি— তুমি এসেছ। তুমি অনেক দিনের প্রতীক্ষিত, অনেক দুঃখের ধন, তুমি বিধাতার কৃপা ভারতে অবতীর্ণ। আমার পূর্ববর্তী বক্তা বলেছেন যে, যুরোপে আজকাল কথা উঠেছে যে মানুষের উন্নতিসাধন ভালোবেসে নয়, বৈজ্ঞানিক নিয়মের জাতায় পিষে মানুষের উৎকর্ষ। অর্থাৎ, যেন কেবলমাত্র পুড়িয়ে-পিটিয়ে কেটে-ছেটে জুড়ে-তেড়ে মানুষকে তৈরি করা যায়। এইজন্তেই মানুষের প্রাণ পীড়িত হয়ে উঠেছে। যন্ত্রকে প্রাণের উপরে প্রতিষ্ঠিত করবার মতো দৌরাত্ম্য আর-কিছুই হতে পারে না। তার পরিচয় বর্তমান যুদ্ধে দেখতে পাচ্ছি। কলিযুগের কলদৈত্য স্বর্গের দেবতাদের নির্বাসিত করে দিয়েছে, কিন্তু আবার তো স্বৰ্গকে ফিরে পেতে হবে। শিবের তৃতীয় নেত্র অগ্নি উদগীরণ না করলে কেমন করে সেই মঙ্গল ভূমিষ্ঠ হবে যা দৈত্যের হাত থেকে স্বৰ্গকে উদ্ধার করবে। কিন্তু, আমাদের দেশে আমরা একেবারে উণ্টে দিক থেকে মরছি— আমরা সয়তানের কর্তৃত্বকে হঠাৎ প্রবল করতে গিয়ে মরি নি ; আমরা মরছি ঔদাসীন্তে, আমরা মরছি জরায় । প্রাণের প্রতি প্রাণের যে সহজ ও প্রবল আকর্ষণ আছে আমরা তা হারিয়েছি ; আমরা পাশের লোককেও আত্মীয় বলে অনুভব করি না, পরিবারপরিজনের মধ্যেই প্রধানত আমাদের আনন্দ ও সহযোগিতা, সেই পরিধির বাইরে আমাদের চেতনা অস্পষ্ট। এইজন্তই আমাদের দেশে দুঃখ, মৃত্যু, অজ্ঞান, দারিদ্র্য। তাই আমরা এবার যৌবনকে আহবান করছি। দেশের যৌবনের দ্বারে আমাদের আবেদন— বঁাচাও, দেশকে তোমরা বাচাও । আমাদের ঔদাসীন্ত বহুদিনের, বহুযুগের ; আমাদের প্রাণশক্তি আচ্ছন্ন আবৃত, একে মুক্ত করে ! কে করবে। দেশের যৌবন— যে যৌবন নূতনকে বিশ্বাস করতে পারে, প্রাণকে যে নিত্য অনুভব করতে পারে। জরায় ব্যক্তিত্ব পঞ্চত্বে বিলীন হবার দিকে যায়। এইজন্তু কোনো জায়গায়