পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (চতুর্বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8b-8 রবীন্দ্র-রচনাবলী রূপকথার রাজপুত্তর তুমি– জগতে একটিমাত্র আছে রাজকন্ত, বিদেশী সমুদ্রের ওপারে, সে আছে তোমারই জন্তে । তখন আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল বাধতে বাধতে এমন কথা যদি মনে করে থাকি যেন আমিই সেই রাজকন্ত। তবে হেসে না। দেখা হবার আগেই ছু ইয়েছিলে রুপোর কাঠি, জাগিয়েছিলে সুপ্ত প্রাণকে। ঐ বয়সে অনেক মেয়ে মনে করেছিল ঐ একই কথা । তারা চিঠি লিখেছিল, ঠিকানা দেয় নি। খেয়াল, মাঝ বসন্তের খেয়াল । ওরই আড়ালে কতদিন আবছা হয়ে গেছে দুপুরবেলাকার পরীক্ষার পড়া, বুকের মধ্যে হঠাৎ উছলে উঠেছে একটা যৌবনের ঢেউ। একেই বলে রোম্যানস্, নবীন বয়সে আপন-ভোলানোর শিল্পকলা। মনের দেহলিতে একেছি আলপনা, কার পা ফেলবার পথে । আরো কিছুদিন যেত, বয়েস পেরিয়ে যেত বিশের কোঠা, গোটাকতক মডার্ন নভেল পড়া হত শেষ, চোখের ঘোর যেত কেটে, হাসতুম নিজের কচিমেয়েপনায়। তার দৃষ্টান্ত দেখেছি কত। সতেরো-আঠারো বছরের মেয়ের দল আছে আই. এ. ক্লাসের শেষ সীমানায়, চশমা চোখে পড়ছে কীটুসের কবিতা, না-দেখা নাইটেঙ্গেলের না-শোনা স্বরে ব্যথিয়েছে তাদের বুকের পাজর, হৃদয়বাতায়নের ঝরোক খুলে গেছে ফেনায়িত সমুদ্রের জনশূন্ততায় উজাড় কোন পরীস্থানে। অনিলবাৰু, তোমার সঙ্গে শুভদৃষ্টির লগ্ন ছিল সেই আলো-আঁধারের ঝিকিমিকিতে। তখন কত দিন দুলেছে কত ঘরের কোণে তোমার কলামূর্তি তরুণীর আর্তচিত্তের রহস্তদোলায়। তার পরে দেখি, দেখতে দেখতে সেই মেয়েদের সময় বয়ে যায়। এসে পড়ে যুগান্তর, ছেড়া মোজা সেলাইয়ের, নতুন বাজারে সওদা করতে পাঠাবার ফর্দ লেখার, চায়ের সভার হাটুজল বন্ধুত্বের। আমার ভাগ্যে রোমানসের ঘনসজল আষাঢ়ে দিন তখনো ফুরোয় নি— সেই রসাভিষিক্ত বাদল-বেলায় আলাপ হল তোমার সঙ্গে অচেনাকে চেনা হল শুরু রোমাঞ্চিত মনে । চেনার প্রথম অধ্যায়েই ধরা পড়ল তুমি একেবারেই দুর্লভ নও। মায়ার টান তো দেখি আমাদেরই দিকে । লক্ষ্যসন্ধানের আগেই ধরা পড়বার মতো তোমার ভাব । এত সহজ মৃগয়ায় পরীক্ষাই হয় না ব্যাধের গুণপনার । উলটে গেল পালা। পথ চেয়ে বসেছিলুম ধরা দেব বলে, ধরবার খেলা হল শুরু। দুঃখ এই তুমি দুর্লভ নও। হায় আমার রাজপুত্র, একটু স্পর্শ লাগতেই তোমার