পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোড়ায় গলদ &>> চন্দ্রকান্ত। সে-কথা অস্বীকার করবার জো নেই। কিন্তু আমাকে বাইরে থেকে বা দেখিস নিমাই, ভিতরে যে কিছু পদ্য নেই তা বলতে পারিনে। আমি, যাকে বলে, চম্পূকাব্য ! গঙ্গাজল ছুয়ে বললেও কেউ বিশ্বাস করে না, কিন্তু মাইরি বলছি আমারও মন এক-একদিন উডু-উডু করে— এমন কি, চাদের আলোয় শুয়ে পড়ে পড়ে এমনও ভেবেছি— আহ, এই সময়ে প্রেয়সী যদি চুলটি বেঁধে, গাটি ধুয়ে, একখানি বাসন্তী রঙের কাপড় প’রে, একগাছি বেলফুলের মালা হাতে করে নিয়ে এসে গলায় পরিয়ে দেয় আর মুখের দিকে চেয়ে চেয়ে বলতে থাকে— জনম অবধি হাম রূপ নেহরমু নয়ন না তিরপিত ভেল, লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়ে রাখমু তবু হিয়ে জুড়ন না গেল। প্রেয়সীও আসে, দু-চার কথা বলেও থাকে, কিন্তু আমার ঐ বর্ণনার সঙ্গে ঠিকটি মেলে না । - নিমাই। দেখো বিনোদ, তোমাদের সঙ্গে একটা বিষয়ে আমার ভারি মতের অনৈক্য হয় । মেয়েমানুষ যদি বডড বেশি জ্যাস্ত গোছের হয় তাকে নিয়ে পুরুষের কখনোই পোষায় না । দু-জন জ্যাস্ত লোকে কখনো রীতিমত মিল হতে পারে ? তোমার কাপড়টি যেমন বেশ নির্বিবাদে গায়ে লেগে রয়েছে স্ত্রীটি ঠিক তেমনি হওয়া চাই—এ বিষয়ে আমি ভাই সম্পূর্ণ রক্ষণশীল কিংবা স্থিতিশীল, কিংবা যা বল । চন্দ্রকাস্ত । তা বটে। মনে করো তোমার জামাটাও যদি জ্যান্ত হত, প্রতি কথায় দু-জনে আপস করতে করতেই দিন যেত, ফস করে যে মাথাটা গলিয়ে দিয়ে পরে ফেলবে তার জো থাকত না । তুমি যখন বোতাম আঁটতে চাও সে হয়তে তার গর্তগুলো প্রাণপণে এটে বসে রইল। তোমার নেমস্তন্ন আছে, থিদেয় পেট চে। টো করছে, তোমার শাল অভিমান করে বসে আছেন ; যতই টানাটানি কর কিছুতেই তার আর ভাজ খোলে না । নিমাই । সেই কথাই বলছি । দেখিস, আমি যাকে বিয়ে করব সে মাটি থেকে মুখ তুলবে না, তার হাসি ঘোমটার মধ্যেই মিলিয়ে যাবে, তার পায়ের মলের শব্দ শুনতে কানে দুরবীন কৰতে হবে । যা হোক বিনোদ, তুমি একটা বিয়ে করে ফেলো । সর্বদা তুমি যে মনটা বিগড়ে বসে রয়েছ সে কেবল গৃহলক্ষ্মীর অভাবে । পূর্বকালে সে ছিল ভালো, বাপমায়ে ছেলেবেলায় বিয়ে দিয়ে দিত— একেবারে শিশুকালেই প্রেমরোগের টিকে দিয়ে রাখা হত । চক্সকান্ত । আমিও বিমুকে এক-একবার সে-কথা বলেছি। একটি স্ত্রী সহস্ৰ