পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোড়ায় গলদ २8*> আজকাল টাকার বড়ো টানাটানি – বই থেকে কিছু পাইনে, দেশে যা বিষয় আছে মামাতো ভাইরা লুঠ করে খেলে—নিজে পাড়াগায়ে পড়ে থেকে বিষয় দেখা, সে মরে গেলেও পারব না— ওকালতি ব্যবসা সবে ধরেছি, ঘর থেকে কেবল গাড়িভাড়াই দিচ্ছি। একলা যখন থাকতুম, আমার কোণের ঘরের ভাঙা চৌকিটিতে এসে বসতুম, আপনাকে রাজা মনে হত। এখন নড়তে চড়তে কেবল মনে হয় আমার এই ভাঙা ঘর ছেড়া বিছানাটুকুও বেদখল হয়ে গেছে — আমাকে আর কোথাও ভালো করে ধরে না। নিমাই, তুমি শুনে রাগ করছ, কিন্তু একটু বুঝে দেখো, একটা জুতোর মধ্যে দুটো পা ঢোকে না, তা দুই পায়ে যতই প্রণয় থাক । নলিনাক্ষ । বিচু যা বলছে ওর সমস্ত কথাই অামি মানি । নিমাই । তা হলে তোমার ভালোবাসার অভাব নেই, কেবল টাকার অভাব । বিনোদবিহারী । কথাটা যে প্রায় একই দাড়ায়— নিমাই। কী বল ! কথাটা একই ! ভালোবাসাকে তুমি একেবারে উড়িয়ে দিতে চাও— - বিনোদবিহারী । না ভাই, আমি ভালোবাসাটাকে স্বায়ুর ব্যামো কিংবা মিথ্যে বলছিনে ; আমি বলছি ও জিনিসটা কিছু শৌখিন জাতের । ওর বিস্তর আসবাবের দরকার । টানাটানির বাজারে ওকে নিয়ে বড়ো বিব্রত হয়ে পড়তে হয় । আমি বেশ বুঝতে পারি, চতুর্দিকটি বেশ মনের মতো হত, ট্রামের ঘড়ঘড় না থাকত, দাসীমাগী ঝগড়া না করত, গয়লা ঠিক নিয়মিত দুধ জোগাত এবং দাম না চাইত, মাসাস্তে বাড়িওয়ালা একবার করে অপমান করে না যেত, জজসাহেব বিচারাসনে বসে আমার ইংরিজি ভুল সংশোধন করে না দিত, তা হলে আমিও ক্রমে ক্রমে ভালোবাসতে পারতুম— কিন্তু এখন সংগীত, চাদের আলো, প্রেমালাপ, এ কিছুই রুচছে না— আমার পটলডাঙার সেই বাসার মধ্যে এ সমস্ত শৌখিন জিনিস পুষতে পারছিনে । চন্দ্রকান্ত। ভালোবাসা যে এতবড়ো ফুলবাবু তা জানতুম না— কী করেই বা জানব, ওঁর সঙ্গে আমার কখনোই পরিচয় নেই। নিমাই। ছি ছি বিনোদ, তোমার এতদিনকার কবিত্ব শেষকালে পয়সার থলির মধ্যে গু জলে হে ! বিনোদবিহারী। নিমাই, তুমি এমন কথাটা বললে ! আমি দুৰ্গন্ধ পয়সার কাঙাল ! ছো: ! অভাবকে কি আমি অভাব বলে ডরাই— তা নয়, কিন্তু তার চেহারাটা অতি বিত্র, জীর্ণশীর্ণ মলিন কুৎসিত কদাকার হাড়-বের-করা, নিতান্ত গায়ের কাছে তাকে সর্বদা সহ হয় না। তার ময়লা হাতে সে পৃথিবীর যা-কিছু ছোয় তাই