পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোড়ায় গলদ ২৫৩ কমলমুখী। তুই বুঝিসনে ইন্দু, ওরা যে পুরুষমানুষ । আমাদের এক ভাব ওদের আর-এক ভাব । জানিসনে, মার কোলে ছেলেটি হবামাত্রই সে কালোই হোক আর স্বন্দরই হোক তাকে সেই মুহূর্ত থেকে ভালোবাসতে না পারলে এ সংসার চলে না—তেমনি স্ত্রীর অদৃষ্টে ষে-স্বামীই জোটে তক্‌খনি যদি সে তাকে ভালোবাসতে না পারে তা হলে সে স্ত্রীরই বা কী দশা হয় আর এই পৃথিবীই বা টেকে কী করে। মেয়েমানুষের ভালোবাসা সবুর করতে পারে না, বিধাতা তার হাতে সে অবসর দেননি । পুরুষমানুষ রয়ে বসে অনেক ঠেকে অনেক ঘা খেয়ে তার পরে ভালোবাসতে শেখে, ততদিন পৃথিবী সবুর করে থাকে, কাজের ব্যাঘাত হয় না । ইন্দুমতী । ইস! কী সব নবাব ! আচ্ছা, দিদি, তুই কি বলিস নিমে গয়লার সঙ্গে আজই যদি আমার বিয়ে হয় অমনি কাল ভোর থেকেই তাড়াতাড়ি তার চরণদুটো ধরে সেবা করতে বসে যাব— মনে করব, ইনি আমার চিরকালের গয়লা, আমার পূর্ব জন্মের গয়লা, বিধাতা একে এবং এর অন্য গোরুগুলিকে গোয়ালমৃদ্ধ আমারই হাতে সমর্পণ করে দিয়েছেন । কমলমুখী। ইন্দু, তুই কী যে বকিস আমি তোর সঙ্গে পেরে উঠিনে ! নিমে গয়লাকে তুই বিয়ে করতে যাবি কেন— সে একে গয়লা তাতে আবার তার দুই বিয়ে । ইন্দুমতী । আচ্ছা না হয় নিমে গয়লা নাই হল—পৃথিবীতে নিমাইচন্দ্রের তো অভাব নেই। কমলমুখী। তা তোর অদৃষ্টে যদি কোনো নিমাই থাকে তা হলে অবস্তি তাকে ভালোবাসবি — ইন্দুমতী । ককখনো বাসব না! আচ্ছা তুমি দেখো। বিয়ে করেছি বলেই যে অমনি তার পরদিন থেকে নিমাই নিমাই করে খেপে বেড়াব আমাকে তেমন মেয়ে পাওনি। আমি দিদি, তোর মতন না ভাই ! তোরা ওই রকম করিস বলেই তো পুরুষগুলোর দেমাক বেড়ে যায়। নইলে তাদের আছে কী? যেমন মূর্তি তেমনি স্বভাব ! সাধে তাদের পায়া ভারি হয়— তোদের যে সেই পায়ে তেল দিতে একদণ্ড তর সয় না। তুই হাসছিস দিদি, কিন্তু আমি সত্যি বলছি, ঐ দাড়িমুখগুলো না হলে কি আর আমাদের একেবারে চলে না । কেন ভাই, তোতে আমাতে তো বেশ ছিলুম। আমাদের কিসের অভাব ছিল। মাঝখানে একজন অপরিচিত পুরুষ এসে আমাদের অপমান করে যায় কেন । যেন আমরা ওঁদের বাড়ির বাগানের বেগুন, ইচ্ছে করলেই তুলে নিতে পারেন, ইচ্ছে করলেই ফেলে দিতে পারেন। আচ্ছা, মনে