পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি ર૪૭ মহেন্দ্ৰ কহিল, “তাই বলিতেছি, আমার মনে হয়, অশোকে আমি বিবাহ না করিলে তাহার মনে একটা খেদ থাকিয়া যাইবে ।” বিহারী কহিল, “সম্ভব বটে।” মহেন্দ্ৰ কহিল, “আমার মনে হয়, সেটা আমার পক্ষে নিতান্ত অন্যায় হইবে।” বিহারী কিঞ্চিৎ অস্বাভাবিক উৎসাহের সহিত কহিল, “বেশ কথা, সে তো ভালো কথা, তুমি রাজি হইলে তো আর কোনো কথাই থাকে না। এ কর্তব্যবৃদ্ধি কাল তোমার মাথায় আসিলেই তো ভালো হইত।” মহেন্দ্র । একদিন দেরিতে আসিয়া কী এমন ক্ষতি হইল । যেই বিবাহের প্রস্তাবে মহেন্দ্র মনকে লাগাম ছাড়িয়া দিল, সেই তাহার পক্ষে ধৈর্য রক্ষা করা দুঃসাধ্য হইয়া উঠিল। তাহার মনে হইতে লাগিল, “আর অধিক কথাবার্তা না হইয়া কাজটা সম্পন্ন হইয়া গেলেই ভালো হয় ।” মাকে গিয়া কহিল, “আচ্ছা মা, তোমার অনুরোধ রাখিব । বিবাহ করিতে রাজি হইলাম।” মা মনে মনে কহিলেন, “বুঝিয়াছি, সেদিন মেজবউ কেন হঠাৎ তাহার বোনঝিকে দেখিতে চলিয়া গেল এবং মহেন্দ্র সাজিয়া বাহির হইল।” তাহার বারংবার অনুরোধ অপেক্ষা অন্নপূর্ণার চক্রান্ত যে সফল হইল, ইহাতে তিনি সমস্ত বিশ্ববিধানের উপর অসন্তুষ্ট হইয়া উঠিলেন । বলিলেন, “একটি ভালো মেয়ে সন্ধান করিতেছি ।” মহেন্দ্র আশার উল্লেখ করিয়া কহিল, ”কন্যা তো পাওয়া গেছে।” রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “সে-কন্যা হইবে না বাছা, তাহা আমি বলিয়া রাখিতেছি।” মহেন্দ্র যথেষ্ট সংযত ভাষায় কহিল, "কেন মা, মেয়েটি তো মন্দ নয়।” রাজলক্ষ্মী। তাহার তিন কুলে কেহ নাই, তাহার সহিত বিবাহ দিয়া আমার কুটুম্বের স্থখ কী হইবে। মহেন্দ্র। কুটুম্বের স্থখ না হইলেও আমি দুঃখিত হইব না, কিন্তু মেয়েটিকে আমার বেশ পছন্দ হইয়াছে, মা । ছেলের জেদ দেখিয়া রাজলক্ষ্মীর চিত্ত আরো কঠিন হইয়া উঠিল । অন্নপূর্ণাকে গিয়া কহিলেন, “বাপ-ম-মরা অলক্ষণা কন্যার সহিত আমার এক ছেলের বিবাহ দিয়া তুমি আমার ছেলেকে আমার কাছ হইতে ভাঙাইয়া লইতে চাও ? এতবড়ো শয়তানি !” অন্নপূর্ণ কাদিয়া কহিলেন, “মহিনের সঙ্গে বিবাহের কোনো কথাই হয় নাই, সে অাপন ইচ্ছামতো তোমাকে কী বলিয়াছে, আমিও জানি না।” ب9b\حـہ (-\