পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি * \9צ צ আশা দুঃখিত হইয়া ভাবিত, তবে তো আমার ভালোবাসায় একটা বল অসম্পূর্ণতা আছে। আমি তো মাসির কথা প্রায়ই ভাবি ; শাশুড়ী চলিয়া গেছেন বলিয়া তো আমার ভয় হয় ।” তখন সে প্রাণপণে এই সকল প্রেমের অপরাধ ক্ষালন করিতে চেষ্টা করে। এখন গৃহকর্ম ভালো করিয়া চলে না— চাকরবাকরেরা ফাকি দিতে আরম্ভ করিয়াছে । একদিন ঝি অস্থখ করিয়াছে বলিয়া আসিল না, বামুনঠাকুর মদ খাইয়া নিরুদ্দেশ হইয়া রহিল। মহেন্দ্র আশাকে কহিল, “বেশ মজা হইয়াছে, আজ আমরা নিজেরা রন্ধনের কাজ সারিয়া লইব ।” মহেন্দ্র গাড়ি করিয়া নিউ মার্কেটে বাজার করিতে গেল। কোন জিনিসটা কী পরিমাণে দরকার, তাহা তাহার কিছুমাত্র জানা ছিল না— কতকগুলা বোঝা লইয়া আনন্দে ঘরে ফিরিয়া আসিল । সেগুলা লইয়া যে কী করিতে হইবে, আশাও তাহ ভালোরূপ জানে না। পরীক্ষায় বেলা দুটা-তিনটা হইয়া গেল এবং নানাবিধ অভূতপূর্ব অখাদ্য উদ্ভাবন করিয়া মহেক্স অত্যন্ত আমোদ বোধ করিল। আশা মহেন্দ্রের আমোদে যোগ দিতে পারিল না, আপন অজ্ঞতা ও অক্ষমতায় মনে মনে অত্যন্ত লজ্জা ও ক্ষোভ পাইল । ঘরে ঘরে জিনিসপত্রের এমনি বিশৃঙ্খলা ঘটিয়াছে যে, আবশ্বকের সময়ে কোনো জিনিস খুজিয়া পাওয়াই কঠিন । মহেন্দ্রের চিকিৎসার অস্ত্র একদিন তরকারি কুটিবার কার্বে নিযুক্ত হইয়া আবর্জনার মধ্যে অজ্ঞাতবাস গ্রহণ করিল এবং তাহার নোটের খাতা হাতপাখার অ্যাকটিনি করিয়া রান্নাঘরের ভস্মশয্যায় বিশ্রাম করিতে লাগিল । এই সকল অভাবনীয় ব্যবস্থাবিপর্যয়ে মহেক্সের কৌতুকের সীমা রহিল না, কিন্তু আশা ব্যথিত হইতে থাকিল । উচ্ছ স্থল যথেচ্ছাচারের স্রোতে সমস্ত ঘরকল্প ভাসাইয়া হাস্তমুখে ভাসিয়া চলা বালিকার কাছে বিভীষিকাজনক বলিয়া বোধ হইতে লাগিল । একদিন সন্ধ্যার সময় দুই জনে ঢাকা-বারান্দায় বিছানা করিয়া বসিয়াছে। সম্মুখে খোলা ছাদ । বৃষ্টির পরে কলিকাতার দিগন্তব্যাপী সৌধশিখরশ্রেণী জ্যোৎস্নায় প্লাবিত। বাগান হইতে রাশীকৃত ভিজা বকুল সংগ্ৰহ করিয়া আশা নতশিরে মালা গাধিতেছে। মহেন্দ্র তাহ লইয়া টানাটানি করিয়া, বাধা ঘটাইয়া, প্রতিকূল সমালোচনা করিয়া, অনৰ্থক একটা কলহ স্বষ্টি করিবার উদযোগ করিতেছিল। আশা এই সকল অকারণ উৎপীড়ন লইয়া তাহাকে ভৎসনা করিবার উপক্রম