পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি OO6. বিনোদিনী করুণচক্ষে মিনতি প্রকাশ করিয়া বিহারীর মুখের দিকে চাহিল— কহিল, “আমার কি থাকা উচিত হয়, আপনিই বলুন না।” বিহারী মুশকিলে পড়িল । থাকা উচিত, এ-কথা সে কেমন করিয়া বলিবে। কহিল, “অবশ্য আপনাকে তো যাইতেই হইবে, না-হয় আর দু-চার দিন থাকিয়া গেলেন, তাহাতে ক্ষতি কী ।” * বিনোদিনী দুই চক্ষু নত করিয়া কহিল, “আপনার সকলেই আমাকে থাকিবার জন্ত অনুরোধ করিতেছেন— আপনাদের কথা এড়াইয়া যাওয়া আমার পক্ষে কঠিন— কিন্তু আপনার বড়ো অন্যায় করিতেছেন । বলিতে বলিতে তাহার ঘনদীর্ঘ চক্ষুপল্লবের মধ্য দিয়া মোটা মোটা অশ্রীর ফোট দ্রুতবেগে গড়াইয়া পড়িতে লাগিল । বিহারী এই নীরব অজস্র অশ্রুজলে ব্যাকুল হইয়া বলিয়া উঠিল, “কয়দিনমাত্র আসিয়া আপনার গুণে আপনি সকলকে বশ করিয়া লইয়াছেন, সেইজন্যই আপনাকে কেহ ছাড়িতে চান না— কিছু মনে করিবেন না বিনোদ-বোঠান, এমন লক্ষ্মীকে কে ইচ্ছা করিয়া বিদায় দেয় ।” আশা এক কোণে ঘোমটা দিয়া বসিয়া ছিল, সে আঁচল তুলিয়া ঘনঘন চোখ মুছিতে লাগিল । ইহার পরে বিনোদিনী আর যাইবার কথা উত্থাপন করিল না। »ጫ মাঝখানের এই গোলমালটা একেবারে মুছিয়া ফেলিবার জন্ত মহেন্দ্র প্রস্তাব করিল, “আসছে রবিবারে দমদমের বাগানে চড়িভাতি করিয়া আসা যাক ৷” আশা অত্যন্ত উৎসাহিত হইয়া উঠিল । বিনোদিনী কিছুতেই রাজি হইল না। মহেন্দ্র ও আশ বিনোদিনীর আপত্তিতে ভারি মুঘড়িয়া গেল। তাহারা মনে করিল, আজকাল বিনোদিনী কেমন যেন দূরে সরিয়া যাইবার উপক্রম করিতেছে । ஒ বিকালবেলায় বিহারী আসিবামাত্র বিনোদিনী কহিল, “দেখুন তো বিহারীবাবু, মহিনবাবু দমদমের বাগানে চড়িভাতি করিতে যাইবেন, আমি সঙ্গে যাইতে চাহি নাই বলিয়া আজ সকাল হইতে দুই জনে মিলিয়া রাগ করিয়া বসিয়াছেন।” বিহারী কহিল, "অন্যায় রাগ করেন নাই। আপনি না গেলে ইহাদের চড়িভাতিতে যে কাগুটা হুইবে, অতিবড়ো শক্ররও যেন তেমন না হয়।”