পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७8७ ।। রবীন্দ্র-রচনাবলী নাই। মহেন্দ্র ঘরে প্রবেশ করিয়া বিনোদিনীর দিকে একেবারেই চাহিল না— মাকে কহিল, “মা, কালেজে আমার রাত্রের কাজ পড়িয়াছে, এখানে থাকিয়া স্ববিধা হয় না – কলেজের কাছে বাসা লইয়াছি। সেখানে আজ হইতে থাকিব ।” রাজলক্ষ্মী মনে মনে অভিমান করিয়া কহিলেন, “তা যাও । পড়ার ক্ষতি হইলে কেমন করিয়া থাকিবে ।” যদিও তাহার রোগ সারিয়াছে, তবু মহেন্দ্র যাইবে শুনিয়া তখনি তিনি নিজেকে অত্যন্ত রুগ্ন ও দুর্বল বলিয়া কল্পনা করিলেন ; বিনোদিনীকে বলিলেন, “দাও তো বাছা, বালিশটা আগাইয়া দাও।” বলিয়া বালিশ অবলম্বন করিয়া শুইলেন, বিনোদিনী আস্তে আস্তে র্তাহার গায়ে হাত বুলাইয়া দিতে লাগিল । মহেন্দ্র একবার মার কপালে হাত দিয়া দেখিল, তাহার নাড়ী পরীক্ষা করিল। রাজলক্ষ্মী হাত ছাড়াইয়া লইয়া কহিলেন, “নাড়ী দেখিয়া তো ভারি বোঝা যায় । তোর আর ভাবিতে হইবে না, আমি বেশ আছি।” বলিয়া অত্যন্ত দুর্বলভাবে পাশ ফিরিয়া শুইলেন । 疇 মহেন্দ্র বিনোদিনীকে কোনো প্রকার বিদায়সম্ভাষণ না করিয়া রাজলক্ষ্মীকে প্রণাম করিয়া চলিয়া গেল । సివి বিনোদিনী মনে মনে ভাবিতে লাগিল, “ব্যাপারখানা কী । অভিমান, না রাগ, না ভয় ? আমাকে দেখাইতে চান, আমাকে কেয়ার করেন না ? বাসায় গিয়া থাকিবেন ? দেখি কত দিন থাকিতে পারেন ?” কিন্তু বিনোদিনীরও মনে মনে একটা অশাস্ত ভাব উপস্থিত হইল । মহেন্দ্রকে সে প্রতিদিন নানা পাশে বদ্ধ ও নানা বাণে বিদ্ধ করিতেছিল, সে-কাজ গিয়া বিনোদিনী যেন এ-পাশ ও-পাশ করিতে লাগিল । বাড়ি হইতে তাহার সমস্ত নেশ চলিয়া গেল। মহেন্দ্রবর্জিত আশা তাহার কাছে নিতান্তই স্বাদহীন । আশার প্রতি মহেন্দ্রের সোহাগ-যত্ব বিনোদিনীর প্রণয়বঞ্চিত চিত্তকে সর্বদাই আলোড়িত করিয়া তুলিত— তাহাতে বিনোদিনীর বিরহিণী কল্পনাকে যে-বেদনায় জাগরূক করিয়া রাখিত তাহার মধ্যে উগ্র উত্তেজনা ছিল । যে-মহেন্দ্র তাহাকে তাহার সমস্ত জীবনের সার্থকতা হইতে ভ্ৰষ্ট করিয়াছে, যে-মহেন্দ্র তাহার মতো স্ত্রীরত্বকে উপেক্ষা করিয়া আশার মতো ক্ষীণবুদ্ধি দানপ্রকৃতি বালিকাকে বরণ করিয়াছে, তাহাকে বিনোদিনী ভালোবাসে কি বিদ্বেষ করে, তাহাকে কঠিন শাস্তি দিবে না তাহাকে হৃদয়সমর্পণ