পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q જરૂર્ટિસ્ટન્ટ y SN চোখের বালি । శ్రీ4వ বিনোদিনী । ঠাকুরপো, তুমি তো সংসারের গতিক জান। এখানে বরাবর থাকিব কেমন করিয়া । লোকে কী বলিবে । বিহারী। লোকে যা বলে বলুক, তুমি কান দিয়ে না। তুমি দেবী— অসহায় বালিকাকে সংসারের নিষ্ঠুর আঘাত হইতে রক্ষণ করা তোমারই উপযুক্ত কাজ। বোঠান, আমি তোমাকে প্রথমে চিনি নাই, সেজন্য আমাকে ক্ষমা করো। আমিও সংকীর্ণহৃদয় সাধারণ ইতরলোকদের মতো মনে মনে তোমার সম্বন্ধে অন্যায় ধারণা স্থান দিয়াছিলাম ; একবার এমনও মনে হইয়াছিল, যেন আশার স্বখে তুমি ঈর্ষা করিতেছ – যেন— কিন্তু সে-সব কথা মুখে উচ্চারণ করিতেও পাপ আছে । তার পরে, তোমার দেবৗহদয়ের পরিচয় আমি পাইয়াছি— তোমার উপর আমার গভীর ভক্তি জন্মিয়াছে বলিয়াই, আজ তোমার কাছে আমার সমস্ত অপরাধ স্বীকার না করিয়া থাকিতে পারিলাম না । 叠 বিনোদিনীর সর্বশরীর পুলকিত হইয়া উঠিল । যদিও সে ছলনা করিতেছিল, তবু বিহারীর এই ভক্তি-উপহার সে মনে মনেও মিথ্যা বলিয়া প্রত্যাখ্যান করিতে পারিল না। এমন জিনিস সে কখনো কাহারও কাছ হইতে পায় নাই । ক্ষণকালের জন্য মনে হইল, সে যেন যথার্থই পবিত্র উন্নত— আশার প্রতি একটা অনির্দেশু দয়ায় তাহার চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল । সেই অশ্রুপাত সে বিহারীর কাছে গোপন করিল না, এবং সেই অশ্রধারা বিনোদিনীর নিজের কাছে নিজেকে পূজনীয় বলিয়া মোহ উৎপাদন করিল। বিহারী বিনোদিনীকে অশ্র ফেলিতে দেখিয়া নিজের আশ্রবেগ সংবরণ করিয়া উঠিয়া বাহিরে মহেন্দ্রের ঘরে গেল। মহেন্দ্র যে হঠাৎ নিজেকে পাযও বলিয়া কেন ঘোষণা করিল, বিহারী তাহার কোনো তাৎপর্ষ খুজিয়া পাইল না। ঘরে গিয়া দেখিল, মহেন্দ্র নাই । খবর পাইল, মহেন্দ্র বেড়াইতে বাহির হইয়াছে। পূর্বে মহেন্দ্র অকারণে কখনোই ঘর ছাড়িয়া বাহির হইত না । স্থপরিচিত লোকের এবং স্থপরিচিত ঘরের বাহিরে মহেক্সের অত্যন্ত ক্লাস্তি ও পীড়া বোধ হইত। বিহারী ভাবিতে ভাবিতে ধীরে ধীরে বাড়ি চলিয়া গেল । বিনোদিনী আশাকে নিজের শয়নঘরে আনিয়া বুকের কাছে টানিয়া দুই চক্ষু জলে ভরিয়া কহিল, ”ভাই চোখের বালি, আমি বড়ো হতভাগিনী, আমি বড়ো অলক্ষণা ।” জাশ ব্যথিত হইয় তাহাকে বাহুপাশে বেষ্টন করিয়া স্নেহার্জকণ্ঠে বলিল, “কেন ভাই, আমন কথা কেন বলিতেছ।” বিনোদিনী রোদনোজ্জসিত শিশুর মতো আশার বক্ষে মুখ রাখিয়া কহিল, “আমি