পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি ԾՆԶ বেড়াইতেছে। সেই-সমস্ত বিরক্তি উত্তরোত্তর জমিতেছিল— আজ একটু আঘাতেই বাহির হইয়া পড়িল । কিন্তু বিনোদিনী পাশের ঘর হইতে যেরূপ ব্যাকুলভাবে ছুটিয়া আসিল, যেরূপ আতকণ্ঠে বিহারীকে রাখিতে চেষ্টা করিল এবং বিহারীর আদেশপালনস্বরূপে আশার সহিত কাশী যাইতে প্রস্তুত হইল, ইহা মহেঞ্জের পক্ষে অভাবিতপূর্ব। এই দৃশুটি মহেন্দ্রকে প্রবল আঘাতে অভিভূত করিয়৷ দিল । সে বলিয়াছিল, সে বিনোদিনীকে ভালোবাসে না ; কিন্তু যাহা শুনিল, যাহা দেখিল, তাহা তাহাকে স্বস্থির হইতে দিল না, তাহাকে চারিদিক হইতে বিচিত্র আকারে পীড়ন করিতে লাগিল । আর কেবলই নিষ্ফল পরিতাপের সহিত মনে হইতে লাগিল, “বিনোদিনী শুনিয়াছে— আমি বলিয়াছি "আমি তাহাকে ভালোবাসি না” ।” ২৩ মহেন্দ্ৰ ভাবিতে লাগিল, “আমি বলিয়াছি, ‘মিথ্যা কথা, আমি বিনোদিনীকে ভালোবাসি না । অত্যন্ত কঠিন করিয়া বলিয়াছি । আমি যে তাহাকে ভালোবাসি তাহা না-ই হইল, কিন্তু ভালোবাসি না, এ-কথাটা বড়ো কঠোর । এ-কথায় আঘাত না পায়, এমন স্ত্রীলোক কে আছে । ইহার প্রতিবাদ করিবার অবসর কবে কোথায় পাইব । ভালোবাসি এ-কথা ঠিক বলা যায় না ; কিন্তু ভালোবাসি না, এই কথাটাকে একটু ফিকা করিয়া, নরম করিয়া জানানো দরকার । বিনোদিনীর মনে এমন একটা নিষ্ঠুর অথচ ভুল সংস্কার থাকিতে দেওয়া অন্যায় ।” এই বলিয়া মহেন্দ্র তাহার বাক্সর মধ্য হইতে আর-একবার তাহার চিঠি তিনখানি পড়িল । মনে মনে কহিল, “বিনোদিনী আমাকে যে ভালোবাসে, ইহাতে সন্দেহ নাই । কিন্তু কাল সে বিহারীর কাছে অমন করিয়া আসিয়া পড়িল কেন । সে কেবল আমাকে দেখাইয়া। আমি যখন তাহাকে ভালোবাসি না স্পষ্ট করিয়া বলিলাম, তখন সে কোনো স্বযোগে আমার কাছে তাহার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান না করিয়া কী করিবে । এমনি করিয়া আমার কাছে অবমানিত হইয়া হয়তো সে বিহারীকে ভালোবাসিতেও পারে।” মহেঞ্জের ক্ষোভ এতই বাড়িয়া উঠিতে লাগিল যে, নিজের চাঞ্চল্যে সে নিজে আশ্চর্ধ এবং ভীত হইয়া উঠিল। না-হয় বিনোদিনী শুনিয়াছে, মহেন্দ্র তাহাকে ভালোবাসে না— তাহাতে দোষ কী । না-হয় এই কথায় অভিমানিনী বিনোদিনী তাহার