পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি )ObسS এক । আমাকে স্থির করে, রক্ষা করে, অামার হৃদয় পরিপূর্ণ করে । তোমার প্রতি লেশমাত্র অন্যায়ের মহাপাপ হইতে, তোমাকে মুহূর্তকাল বিস্মরণের বিভীষিক হইতে আমাকে উদ্ধার করে ।” এমনি করিয়া মহেন্দ্র নিজেকে আশার অভিমুখে সবেগে তাড়না করিবার জন্য অনেক রাত ধরিয়া অনেক কথা লিখিল। দূর হইতে সুদূরে অনেকগুলি গির্জার ঘড়িতে ঢং ঢং করিয়া তিনটা বাজিল। কলিকাতার পথে গাড়ির শব্দ আর প্রায় নাই, পাড়ার পরপ্রাস্তে কোনো দোতলা হইতে নটীকণ্ঠে বেহাগ-রাগিণীর যে-গান উঠিতেছিল সেও বিশ্বব্যাপিনী শাস্তি ও নিদ্রার মধ্যে একেবারে ডুবিয়া গেছে। মহেন্দ্র একান্তমনে আশাকে স্মরণ করিয়া এবং মনের উদবেগ দীর্ঘ পত্রে নানারূপে ব্যক্ত করিয়া অনেকটা সাত্বনা পাইল, এবং বিছানায় শুইবামাত্র ঘুম আসিতে তাহার কিছুমাত্র বিলম্ব হইল না। সকালে মহেন্দ্র যখন জাগিয়া উঠিল, তখন বেলা হইয়াছে, ঘরের মধ্যে রৌদ্র আসিয়াছে। মহেন্দ্র তাড়াতাড়ি উঠিয়া বসিল ; নিদ্রার পর গতরাত্রির সমস্ত ব্যাপার মনের মধ্যে হালকা হইয়া আসিয়াছে। বিছানার বাহিরে আসিয়া মহেন্দ্ৰ দেখিল— গতরাত্রে আশাকে সে যে-চিঠি লিথিয়াছিল, তাহা টিপাইয়ের উপর দোয়াত দিয়া চাপা রহিয়াছে। সেখানি পুনর্বার পড়িয়া মহেন্দ্র ভাবিল, “করেছি কী । এ যে নভেলি ব্যাপার। ভাগ্যে পাঠাই নাই । আশা পড়িলে কী মনে করিত। সে তো এর অর্ধেক কথা বুঝিতেই পারিত না।” রাত্রে ক্ষণিক কারণে হৃদয়াবেগ যে অসংগত বাড়িয়া উঠিয়াছিল, ইহাতে মহেন্দ্র লজ্জা পাইল ; চিঠিখানা টুকরা টুকরা করিয়া ছিড়িয়া ফেলিল ; সহজ ভাষায় আশাকে একখানি সংক্ষিপ্ত চিঠি লিখিল, “তুমি আর কত দেরি করিবে । তোমার জেঠামহাশয়ের যদি শীঘ্র ফিরিবার কথা না থাকে, তবে আমাকে লিখিয়ে, আমি নিজে গিয়া তোমাকে লইয়া আসিব । এখানে একলা আমার ভালো লাগিতেছে না।” ミや মহেন্দ্রের চলিয়া যাওয়ার কিছুদিন পরেই আশা যখন কাশীতে আসিল, তখন অন্নপূর্ণার মনে বড়োই আশঙ্কা জন্মিল। আশাকে তিনি নানাপ্রকারে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন, “ই রে চুনি, তুই যে তোর সেই চোখের বালির কথা বলিতেছিলি, তোর মতে, তার মতন এমন গুণবতী মেয়ে আর জগতে নাই ?” \3ա9ՇՋ