পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Φινίν রবীন্দ্র-রচনাবলী পতনশব্দ শুনিয়া মহেন্দ্র ছুটিয়া আসিল । দেখিল, বিনোদিনীর বাম হাতের কমুয়ের কাছে কাটিয়া রক্ত পড়িতেছে । মহেন্দ্ৰ কহিল, “ইস, এ যে অনেকটা কাটিয়াছে।” বলিয়া তৎক্ষণাৎ নিজের পাতলা জামা খানিকটা টানিয়া ছিড়িয়া ক্ষতস্থানে ব্যাণ্ডেজ বাধিতে প্রস্তুত হইল । বিনোদিনী তাড়াতাড়ি হাত সরাইয়া লইয়া কহিল, “না না, কিছুই করিয়ো না, রক্ত পড়িতে দাও।” মহেন্দ্ৰ কহিল, "বাধিয়া একটা ঔষধ দিতেছি, তা হইলে আর ব্যথা হইবে না, শীঘ্র সারিয়া যাইবে ।” বিনোদিনী সরিয়া গিয়া কহিল, “আমি ব্যথা সারাইতে চাই না, এ কাটা আমার থাক ।” মহেন্দ্ৰ কহিল, "আজ অধীর হইয়া তোমাকে আমি লোকের সামনে অপদস্থ করিয়াছি, আমাকে মাপ করিতে পারিবে কি।” বিনোদিনী কহিল, “মাপ কিসের জন্য । বেশ করিয়াছ । আমি কি লোককে ভয় করি। আমি কাহাকেও মানি না। যাহারা আঘাত করিয়া ফেলিয়া চলিয়া যায়, তাহারাই কি আমার সব, আর যাহারা আমাকে পায়ে ধরিয়া টানিয়া রাখিতে চায়, তাহারা আমার কেহই নহে ?” মহেন্দ্র উন্মত্ত হইয়া গদগদকণ্ঠে বলিয়া উঠিল, “বিনোদিনী, তবে আমার ভালোবাসা তুমি পায়ে ঠেলিবে না ?” বিনোদিনী কহিল, "মাথায় করিয়া রাখিব । ভালোবাসা আমি জন্মাবধি এত বেশি পাই নাই যে, "চাই না? বলিয়া ফিরাইয়া দিতে পারি।” মহেন্দ্র তখন দুই হাতে বিনোদিনীর দুই হাত ধরিয়া কহিল, “তবে এসো আমার ঘরে । তোমাকে আজ আমি ব্যথা দিয়াছি, তুমিও আমাকে ব্যথা দিয়া চলিয়া আসিয়াছ— যতক্ষণ তাহা একেবারে মুছিয়া না যাইবে, ততক্ষণ আমার খাইয়া শুইয়া কিছুতেই সুখ নাই ।” । বিনোদিনী কহিল, “আজ নয়, আজ আমাকে ছাড়িয়া দাও । যদি তোমাকে দুঃখ দিয়া থাকি, মাপ করে ।” মহেন্দ্ৰ কহিল, “তুমিও আমাকে মাপ করে, নহিলে আমি রাত্রে ঘুমাইতে পারিব না ।” বিনোদিনী কহিল, “মাপ করিলাম।” মহেন্দ্র তখনই অধীর হইয়া বিনোদিনীর কাছে হাতে-হাতে ক্ষমা ও ভালোবাসার