পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|లీసిన রবীন্দ্র-রচনাবলী বিনোদিনী কহিল, “দেখে তো পিসিম, মিছামিছি কেবল আমার কাজে দেরি করাইয়া দিতেছেন।” মহেন্দ্ৰ কহিল, “বিলক্ষণ। আমি আরো ওঁর কাজে সাহায্য করিতেছিলাম।” রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “আমার কপাল ! তুই আবার সাহায্য করিবি ! জান বউ, মহিনের বরাবর ওইরকম। চিরকাল মা-খুড়ির আদর পাইয়া ও যদি কোনো কাজ নিজের হাতে করিতে পারে।” এই বলিয়া মাতা পরমস্নেহে কর্মে-অপটু মহেন্দ্রের প্রতি নেত্রপাত করিলেন । কেমন করিয়া এই অকৰ্মণ্য একান্ত মাতৃস্নেহাপেক্ষী বয়স্ক সস্তানটিকে সর্বপ্রকার আরামে রাখিতে পরিবেন, বিনোদিনীর সহিত রাজলক্ষ্মীর সেই একমাত্র পরামর্শ । এই পুত্রসেবাব্যাপারে বিনোদিনীর প্রতি নির্ভর করিয়া তিনি নিতান্ত নিশ্চিন্ত, পরম মুখী । সম্প্রতি বিনোদিনীর মর্যাদা যে মহেন্দ্ৰ বুঝিয়াছে এবং বিনোদিনীকে রাখিবার জন্য তাহার যত্ব হইয়াছে, ইহাতেও রাজলক্ষ্মী আনন্দিত । মহেন্দ্রকে শুনাইয়া শুনাইয়া তিনি কহিলেন, “বউ, আজ তো তুমি মহিনের গরম কাপড় রোদে দিয়া তুলিলে, কাল মহিনের নূতন রুমালগুলিতে উহার নামের অক্ষর সেলাই করিয়া দিতে হইবে । তোমাকে এখানে আনিয়া অবধি যত্ন-আদর করিতে পারিলাম না বাছা, কেবল খাটাইয়া মারিলাম।” বিনোদিনী কহিল, “পিসিম, অমন করিয়া যদি বল তবে বুঝিব, তুমি আমাকে পর ভাবিতেছ।” রাজলক্ষ্মী আদর করিয়া কহিলেন, “আহা, মা, তোমার মতো আপন আমি পাব কোথায় ।” så বিনোদিনীর কাপড়-তোলা শেষ হইলে রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “এখন কি তবে সেই চিনির রসটা চড়াইয়া দিব, না, এখন তোমার অন্ত কাজ আছে ?” বিনোদিনী কহিল, "না, পিসিমা, অন্য কাজ আর কই । চলো, মিঠাইগুলি তৈরি করিয়া আসিগে ।” মহেন্দ্ৰ কহিল, “মা, এইমাত্র অনুতাপ করিতেছিলে উহাকে খাটাইয়া মারিতেছ, আবার এখনই কাজে টানিয়া লইয়া চলিলে ?” রাজলক্ষ্মী বিনোদিনীর চিবুক স্পর্শ করিয়া কহিলেন, “আমাদের লক্ষ্মী মেয়ে যে কাজ করিতেই ভালোবাসে।” . মহেন্দ্ৰ কহিল, "আজ সন্ধ্যাবেলায় আমার হাতে কোনো কাজ নাই, ভাবিয়াছিলাম বালিকে লইয়া একটা বই পড়িব ।”