পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি అనిశి ছেলেটি বিবাহের পর হইতে নিজের বউকে লইয়াই এমনি মাতিয়া রহিয়াছে— বন্ধুবান্ধবরা আসিয়। আর কী করিবে বলে ।” কথাটা রাজলক্ষ্মীর অত্যন্ত সংগত বোধ হইল। স্ত্রীকে লইয়া মহেন্দ্র তাহার সমস্ত হিতৈষীদের দূর করিয়াছে। বিহারীর তো অভিমান হইতেই পারে— কেন সে আসিবে । বিহারীকে নিজের দলে পাইয়া তাহার প্রতি রাজলক্ষ্মীর সমবেদন বাড়িয়া উঠিল। বিহারী যে ছেলেবেলা হইতে একান্ত নিঃস্বার্থভাবে মহেন্দ্রের কত উপকার করিয়াছে, তাহার জন্য কতবার কত কষ্ট সহ করিয়াছে, সে সমস্ত তিনি বিনোদিনীর কাছে বিবৃত করিয়া বলিতে লাগিলেন– ছেলের উপর তাহার নিজের যা নালিশ তা বিহারীর বিবরণ দ্বারা সমর্থন করিতে লাগিলেন । দু-দিন বউকে পাইয়া মহেন্দ্র যদি তাহার চিরকালের বন্ধুকে এমন অনাদর করে, তবে সংসারে দ্যায়ধর্ম আর রহিল কোথায় । বিনোদিনী কহিল, “কাল রবিবার আছে, তুমি বিহারী-ঠাকুরপোকে নিমন্ত্রণ করিয়া খাওয়াও, তিনি খুশি হইবেন ।” রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “ঠিক বলিয়াছ বউ, তা হইলে মহিনকে ডাকাই, সে বিহারীকে নিমন্ত্রণ করিয়া পাঠাইবে ।” বিনোদিনী । না পিসিম, তুমি নিজে নিমন্ত্রণ করে । রাজলক্ষ্মী । আমি কি তোমাদের মতো লিখিতে পড়িতে জানি । বিনোদিনী । তা হোক, তোমার হইয়া না-হয় আমিই লিথিয়া দিতেছি । বিনোদিনী রাজলক্ষ্মীর নাম দিয়া নিজেই নিমন্ত্রণ চিঠি লিথিয়া পাঠাইল । রবিবার দিন মহেন্দ্রের অত্যস্ত আগ্রহের দিন। পূর্বরাত্রি হইতেই তাহার কল্পনা উদাম হইয়া উঠিতে থাকে, যদিও এ-পর্যন্ত তাহার কল্পনার অনুরূপ কিছুই হয় নাই– তবু রবিবারের ভোরের আলো তাহার চক্ষে মধুবর্ষণ করিতে লাগিল। জাগ্রত নগরীর সমস্ত কোলাহল তাহার কানে অপরূপ সংগীতের মতো আসিয়া প্রবেশ করিল। stä কিন্তু ব্যাপারখানা কী । মার আজ কোনো ব্ৰত আছে নাকি । অন্যদিনের মতো বিনোদিনীর প্রতি গৃহকর্মের ভার দিয়া তিনি তো বিশ্রাম করিতেছেন না। আজ তিনি নিজেই ব্যস্ত হইয়া বেড়াইতেছেন । এই হাঙ্গামে দশটা বাজিয়া গেল— ইতিমধ্যে মহেন্দ্র কোনো ছুতায় বিনোদিনীর সঙ্গে এক মুহূর্ত বিরলে দেখা করিতে পারিল না। বই পড়িতে চেষ্টা করিল, পড়ায় কিছুতেই মন বসিল না— খবরের কাগজের একটা অনাবশ্বক বিজ্ঞাপনে পনেরো \9-6. S