পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8०७ ब्रदौट्ज-ब्रछमांगलौ কথা কহিলেন না, এমন কি, আমার মুখের দিকেও যেন চাহিতে পারিলেন না । আমি তিন-চারদিন চিঠি লিখিতে পারি নাই বলিয়া কি রাগ করিয়াছেন, আমি মালির অনুরোধে বেশিদিন কাশীতে ছিলাম বলিয়া কি বিরক্ত হইয়াছেন।” অপরাধ কোন ছিদ্ৰ দিয়া কেমন করিয়া প্রবেশ করিল, ইহাই সে নিতান্ত ক্লিষ্টহদয়ে সন্ধান করিতে লাগিল । মহেন্দ্র কালেজ হইতে ফিরিয়া আসিল । অপরাহ্লে জলপানের সময় রাজলক্ষ্মী ছিলেন, আশাও ঘোমটা দিয়া অদূরে দুয়ার ধরিয়া দাড়াইয়া ছিল, কিন্তু আর কেহই ছিল না । রাজলক্ষ্মী উদবিগ্ন হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “আজ কি তোর অম্বথ করিয়াছে, भश्नि ।” মহেন্দ্র বিরক্তভাবে কহিল, “না মা, অমুখ কেন করবে।” রাজলক্ষ্মী । তবে তুই যে কিছু খাইতেছিস না ! মহেন্দ্র পুনর্বার উত্ত্যক্তস্বরে কহিল, “এই তো, খাচ্ছি না তো কী ।” মহেন্দ্র গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় একখানা পাতলা চাদর গায়ে ছাদের এধারে ওধারে বেড়াইতে লাগিল। মনে বড়ো আশা ছিল, তাহাদের নিয়মিত পড়াটা আজ ক্ষান্ত থাকিবে না। আনন্দমঠ প্রায় শেষ হইয়াছে, আর গুটি-দুই-তিন অধ্যায় বাকি আছে মাত্র-বিনোদিনী যত নিষ্ঠুর হোক, সে-কয়টা অধ্যায় আজ তাহাকে নিশ্চয় শুনাইয়া যাইবে । কিন্তু সন্ধ্যা অতীত হইল, সময় উত্তীর্ণ হইয়া গেল, গুরুভার নৈরাশু) বহিয়া মহেন্দ্রকে শুইতে যাইতে হইল । সজ্জিত লজ্জাম্বিত আশা ধীরে ধীরে শয়নগৃহে প্রবেশ করিল। দেখিল, বিছানায় মহেন্দ্ৰ শুইয়া পড়িয়াছে। তখন, কেমন করিয়া অগ্রসর হইবে ভাবিয়া পাইল না। বিচ্ছেদের পর কিছুক্ষণ একটা নূতন লজ্জা আসে– যেখানটিতে ছাড়িয়া ৰাওয়া যায় ঠিক সেইখানটিতে মিলিবার পূর্বে পরস্পর পরস্পরের নিকট হইতে নূতন সম্ভাষণের প্রত্যাশ করে। আশা তাহার সেই চিরপরিচিত আনন্দশষ্যাটিতে আজ অনাহুত কেমন করিয়া প্রবেশ করিবে। দ্বারের কাছে অনেকক্ষণ দাড়াইয়া রহিল— মহেন্দ্রের কোনো সাড়া পাইল না। অত্যন্ত ধীরে ধীরে এক পা এক পা করিয়া অগ্রসর হইতে লাগিল। যদি অসতর্কে দৈবাৎ কোনো গহনা বাজিয়া উঠে তো সে লজ্জায় মরিয়া যায়। কম্পিতহদয়ে আশা মশারির কাছে আসিয়া অনুভব করিল, মহেন্দ্র ঘুমাইতেছে । তখন তাহার নিজের সাজসজ্জা তাহাকে সর্বাঙ্গে বেষ্টন করিয়া পরিহাস করিতে লাগিল। ইচ্ছা হইল, বিদ্যুদবেগে এ-ঘর হইতে বাহির হইয়া অন্ত কোথাও গিয়া শোয় ।