পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8રર রবীন্দ্র-রচনাবলী বিনোদিনী। জাজ রাত্রে তবে আমি এইখানেই থাকি । বিহারী। না, এত বিশ্বাস আমার নিজের পরে নাই। শুনিয়া তৎক্ষণাৎ বিনোদিনী চৌকি হইতে ভূমিতে লুটাইয়া পড়িয়া, বিহারীর দুই পা প্রাণপণ বলে বক্ষে চাপিয়া ধরিয়া কহিল, “ওইটুকু দুর্বলতা রাখো, ঠাকুরপো । একেবারে পাথরের দেবতার মতো পবিত্র হইয়ো না । মন্দকে ভালোবাসিয়া একটুখানি মন্দ হও ।” বলিয়া বিনোদিনী বিহারীর পদযুগল বার বার চুম্বন করিল। বিহারী বিনোদিনীর এই আকস্মিক অভাবনীয় ব্যবহারে ক্ষণকালের জন্ত যেন আত্মসংবরণ করিতে পারিল না। তাহার শরীর-মনের সমস্ত গ্রন্থি যেন শিথিল হইয়া আসিল । বিনোদিনী বিহারীর এই স্তন্ধ বিহবল ভাব অনুভব করিয়া তাহার পা ছাড়িয়া দিয়া নিজের দুই হাটুর উপর উন্নত হইয়া উঠিল, এবং চেকিতে আসীন বিহারীর গলদেশ বাছতে বেষ্টন করিয়া বলিল, “জীবনসর্বস্ব, জানি তুমি আমার চিরকালের নও, কিন্তু আজ এক মুহুর্তের জন্য আমাকে ভালোবাসো। তারপরে আমি আমাদের সেই বনে-জঙ্গলে চলিয়া যাইব, কাহারও কাছে কিছুই চাহিব না। মরণ পর্যন্ত মনে রাখিবার মতো আমাকে একটা কিছু দাও।” বলিয়া বিনোদিনী চোখ বুজিয়া তাহার ওষ্ঠাধর বিহারীর কাছে অগ্রসর করিয়া দিল । মুহূর্তকালের জন্য দুইজনে নিশ্চল এবং সমস্ত ঘর নিস্তব্ধ হইয়া রহিল । তাহার পর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বিহারী ধীরে ধীরে বিনোদিনীর হাত ছাড়াইয়া লইয়া অন্ত চৌকিতে গিয়া বসিল এবং রুদ্ধপ্রায় কণ্ঠস্বর পরিষ্কার করিয়া লইয়া কহিল, “আজ রাত্রি একটার সময় একটা প্যাসেঞ্জার-ট্রেন আছে।” বিনোদিনী একটুখানি স্তব্ধ হইয়া রহিল, তাহার পরে অস্ফুটকণ্ঠে কহিল, “সেই dप्लेटमहे शांझेर ।” এমন সময়, পায়ে জুতা নাই, গায়ে জামা নাই, বসন্ত তাহার পরিস্ফুট গৌরস্থদের দেহ লইয়া বিহারীর চৌকির কাছে আসিয়া দাড়াইয় গম্ভীৰ্বমুখে বিনোদিনীকে দেখিতে লাগিল । বিহারী জিজ্ঞাসা করিল, “শুতে যাসনি যে * বসন্ত কোনো উত্তর না দিয়া গভীরমুখে দাড়াইয়া রহিল। বিনোদিনী দুই হাত বাড়াইয়া দিল । বসন্ত প্রথমে একটু দ্বিধা করিয়া, ধীরে ধীরে বিনোদিনীর কাছে গেল। বিনোদিনী তাহাকে দুই হাতে বুকের মধ্যে চাপিয়া ধরিয়া ঝরঝর করিয়া কাদিতে লাগিল ।