পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

808 द्रवैौटल-ब्रध्नांयलौ কহিল, “আর-কাহারও জন্ত এত দুঃখ সহ করা যাইতে পারে, কিন্তু তাই বলিয়া আশার জন্য নয়। এই দৈন্য, এই বনবাস, এই লোকনিন্দা, এই অবজ্ঞা, এই জীবনের সকলপ্রকার অপরিতৃপ্তি, কেবল আশারই জন্য আমাকে বহন করিতে হইবে— এভবড়ো ফাকি কেন আমি মাথায় করিয়া লইলাম। কেন আমার সর্বনাশের ব্ৰত সম্পূর্ণ করিয়া আসিলাম না। নির্বোধ, আমি নির্বোধ। আমি কেন বিহারীকে ভালোবাসিলাম * 塞 বিনোদিনী যখন কাঠের মূর্তির মতো ঘরের মধ্যে কঠিন হইয়া বসিয়া ছিল, এমন সময় তাহার দিদিশাশুড়ী জামাইবাড়ি হইতে ফিরিয়া আসিয়াই তাহাকে কহিল, “পোড়ারমুখী, কী সব কথা শুনিতেছি ।” বিনোদিনী কহিল, “যাহা শুনিতেছ সবই সত্য কথা ।” দিদিশাশুড়ী। তবে এ কলঙ্ক পাড়ায় বহিয়া আনিবার কী দরকার ছিল— এখানে কেন আসিলি । রুদ্ধ ক্ষোভে বিনোদিনী চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। দিদিশাশুড়ী কহিল, “বাছ, এখানে তোমার থাকা হইবে না, তাহা বলিতেছি। পোড়া অদৃষ্টে আমার সবাই মরিয়া-ঝরিয়া গেল, ইহাও সহ্য করিয়া বাচিয়া আছি, কিন্তু তাই বলিয়া এ-সকল ব্যাপার আমি সহিতে পারিব না। ছিছি, আমাদের মাথ হেঁট করিলে । তুমি এখনই যাও।” বিনোদিনী কহিল, “আমি এখনই যাইব ।” ای এমন সময় মহেন্দ্র, স্বান নাই, আহার নাই, উস্কগুস্ক চুল করিয়া হঠাৎ আসিয়া উপস্থিত হইল । সমস্ত রাত্রির অনিদ্রায় তাহার চক্ষু রক্তবর্ণ, মুখ শুষ্ক । অন্ধকার থাকিতেই ভোরে আসিয়া সে বিনোদিনীকে লইয়া যাইবার জন্য দ্বিতীয় বার চেষ্টা করিবে, এইরূপ তাহার সংকল্প ছিল । কিন্তু পূর্বদিনে বিনোদিনীর অভূতপূর্ব ঘৃণার অভিঘাত পাইয়া তাহার মনে নানাপ্রকার দ্বিধার উদয় হইতে লাগিল। ক্রমে যখন বেলা হইয়া গেল, রেলগাড়ির সময় আসন্ন হইয়া আসিল, তখন স্টেশনের যাত্রিশালা হইতে বাহির হইয়া, মন হইতে সর্বপ্রকার বিচারবিতর্ক সবলে দূর করিয়া, গাড়ি চড়িয়া মহেন্দ্র একেবারে বিনোদিনীর দ্বারে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। লঙ্গা ত্যাগ করিয়া প্রকাশ্বে দুঃসাহসের কাজ করিতে প্রবৃত্ত হইলে যে একটা স্পর্ধাপূর্ণ বল জন্মে, সেই বলের আবেগে মহেঞ্জ একটা উল্লান্ত আনন্দ বোধ করিল— তাহার সমস্ত অবসাদ ও দ্বিধা চুর্ণ হইয়া গেল। গ্রামের কৌতুহলী লোকগুলি তাহার উন্মত্ত দৃষ্টিতে ধূলির নিজাব পুত্তলিকার