পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি SSWE) তাহার নিজে না করিলে নয়, ইহাই চকিতের মধ্যে মনে উদয় হইয় তাহার শ্রাস্তির বোঝায় আরও বোঝা চাপিল । মহেন্দ্র সিড়ির কাছে কিছুক্ষণ দাড়াইয়া নিজেকে সামলাইয়া লইল— বিনোদিনীর প্রতি তাহার ষে প্রেম ছিল, তাহাকে উত্তেজিত করিল। নিজেকে বুৰাইল যে, এতদিন সমস্ত পৃথিবীকে ভুলিয়া সে যাহাকে চাহিয়াছিল, আজ তাহাকে পাইয়াছে, আজি উভয়ের মাঝখানে কোনো বাধা নাই— আজ মহেন্দ্রের আনন্দের দিন । কিন্তু কোনো বাধা যে নাই, তাহাই সর্বাপেক্ষা বড়ো বাধা, আজ মহেন্দ্র নিজেই নিজের বাধা । বিনোদিনী রাস্ত হইতে মহেন্দ্রকে দেখিয়া তাহার ধ্যানাসন হইতে উঠিয়া ঘরে আলো জালিল, এবং একটা সেলাই কোলে লইয়া নতশিরে তাহাতে নিবিষ্ট হইল— এই সেলাই বিনোদিনীর আবরণ, ইহার অন্তরালে তাহার যেন একটা च्षांख्वंध्र उपां८छ् । মহেন্দ্র ঘরে ঢুকিয়া কহিল, “বিনোদ, এখানে নিশ্চয় তোমার অনেক অস্থবিধা ঘটিতেছে।” _ বিনোদিনী সেলাই করিতে করিতে বলিল, “কিছুমাত্র না।” মহেন্দ্ৰ কহিল, “আমি আর দুই-তিন দিনের মধ্যেই সমস্ত আসবাব আনিয়া উপস্থিত করিব, এই কয়দিন তোমাকে একটু কষ্ট পাইতে হইবে।” বিনোদিনী কহিল, "না, সে কিছুতেই হইতে পারিবে না— তুমি আর-একটিও আসবাব আনিয়ো না, এখানে যাহা আছে তাহা আমার আবশুকের চেয়ে ঢের বেশি ।” মহেন্দ্র কহিল, “আমি-হতভাগ্যও কি সেই ঢের বেশির মধ্যে ।” বিনোদিনী । নিজেকে অত বেশি মনে করিতে নাই— একটু বিনয় থাকা ভালো । সেই নির্জন দীপালোকে কর্মরত নতশির বিনোদিনীর আত্মসমাহিত মূর্তি দেখিয়া মুহূর্তের মধ্যে মহেঞ্জের মনে আবার সেই মোহের সঞ্চার হইল । বাড়িতে হইলে ছুটিয়া সে বিনোদিনীর পায়ের কাছে আসিয়া পড়িত— কিন্তু এ তো বাড়ি নহে, সেইজন্য মহেন্দ্র তাহা পারিল না। আজ বিনোদিনী অসহায়, একান্তই সে মহেন্দ্রের আয়ত্তের মধ্যে, আজ নিজেকে সংযত না রাখিলে বড়োই কাপুরুষতা হয়। বিনোদিনী কহিল, “এখানে তুমি তোমার বই-কাপড়গুলা আনিলে কেন।” মহেন্দ্র কহিল, “ওগুলাকে যে আমি আমার আবশ্বকের মধ্যেই গণ্য করি । । ওগুলা "ঢের বেশি'র দলে নয় ।”