পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি 884 বিনোদিনী ভূমিতে বসিয়া পুনরায় নিরুত্তরে সেলাই করিতে লাগিল। মহেন্দ্র কিছুক্ষণ স্থিরভাবে তাহার মুখের দিকে চাহিয়া বলিয়া উঠিল, “নিষ্ঠুর, বিনোদ, তুমি নিষ্ঠুর । আমি অত্যন্ত হতভাগ্য যে, আমি তোমাকে ভালোবাসিয়াছি।” বিনোদিনী সেলাইয়ে একটা ভুল করিয়া আলোর কাছে ধরিয়া তাহা বহুষত্ত্বে পুনর্বার খুলিতে লাগিল । মহেঞ্জের ইচ্ছা করিতে লাগিল, বিনোদিনীর ওই পাষাণ হৃদয়টাকে নিজের কঠিন মুষ্টির মধ্যে সবলে চাপিয়া ভাঙিয়া ফেলে। এই নীরব নির্দয়তা ও অবিচলিত উপেক্ষাকে প্রবল আঘাত করিয়া যেন বাহুবলের দ্বারা পরাস্ত করিতে ইচ্ছা করে । মহেন্দ্র ঘর হইতে বাহির হইয়া পুনরায় ফিরিয়া আসিল— কহিল, “আমি না থাকিলে এখানে একাকিনী তোমাকে কে রক্ষা করিবে ।” বিনোদিনী কহিল, “সেজন্য তুমি কিছুমাত্র ভয় করিয়ো না । পিসিমা খেমিকে ছাড়াইয়া দিয়াছেন, সে আজ আমার এখানে আসিয়া কাজ লইয়াছে। দ্বারে তালা দিয়া আমরা দুই স্ত্রীলোকে এখানে বেশ থাকিব ।” মনে মনে যতই রাগ হইতে লাগিল, বিনোদিনীর প্রতি মহেন্দ্রের আকর্ষণ ততই একান্ত প্রবল হইয়া উঠিল। ওই অটল মূর্তিকে বজবলে বক্ষে চাপিয়া ধরিয়া ক্লিষ্ট পিষ্ট করিয়া ফেলিতে ইচ্ছা করিতে লাগিল । সেই দারুণ ইচ্ছার হাত এড়াইবার জন্ত মহেন্দ্র ছুটিয়া বাড়ি হইতে বাহির হইয়া গেল । سي রাস্তায় ঘুরিতে ঘুরিতে মহেন্দ্র প্রতিজ্ঞা করিতে লাগিল, বিনোদিনীকে সে উপেক্ষার পরিবর্তে উপেক্ষা দেখাইবে । যে-অবস্থায় বিশ্বজগতে বিনোদিনীর একমাত্র নির্ভর মহেন্দ্র সে-অবস্থাতেও মহেন্দ্রকে এমন নীরবে নিৰ্ভয়ে, এমন স্বৰূঢ় হুম্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান— এতবড়ো অপমান কি কোনো পুরুষের ভাগে কখনো ঘটিয়াছে। মহেঞ্জের গর্ব চূর্ণ হইয়াও কিছুতেই মরিতে চাহিল না, সে কেবলই । পীড়িত দলিত হইতে লাগিল। মহেন্দ্ৰ কহিল, "আমি কি এতই অপদার্থ। . আমার । সম্বন্ধে এতবড়ো স্পধ কী করিয়া তাহার মনে হইল । আমি ছাড়া এখন তাহার আর কে আছে।” . . ভাবিতে ভাবিতে হঠাৎ মনে পড়িল— বিহারী । হঠাৎ এক মুহুর্তের জন্য তাহার । বক্ষের সমস্ত রক্তপ্রবাহ যেন স্তন্ধ হইয়া গেল । বিহারীর উপরেই বিনোদিনী নির্ভর স্থাপন করিয়া আছে— আমি তাহার উপলক্ষমাত্র, আমি তাহার সোপান, তাহার প৷ রাখিবার, পদে-পদে পদাঘাত করিবার স্থান । সেই সাহসেই আমার প্রতি এত ۹ : ) سیاسوعا