পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88b রবীন্দ্র-রচনাবলী মহেন্দ্ৰ কহিল, “ভালোই আছে। বিহারী যে পশ্চিমে চলিয়া গেল।”— মহেন্দ্র এমন ভাবে বলিল, যেন বিহারী আজই রওনা হইয়াছে । বিনোদিনীর মুখ আর-একবার পাংশুবর্ণ হইয়া গেল । পুনর্বার আত্মসংবরণ করিয়া সে কহিল, “এমন চঞ্চল লোকও তো দেখি নাই । আমাদের সমস্ত খবর পাইয়াছেন বুঝি ? ঠাকুরপো খুব কি রাগ করিয়াছেন ।” মহেন্দ্র। তা না হইলে এই অসহ গরমের সময় কি মানুষ শখ করিয়া পশ্চিমে বেড়াইতে যায় । বিনোদিনী । আমার কথা কিছু বলিলেন না কি । মহেন্দ্র । বলিবার আর কী আছে। এই লও বিহারীর চিঠি । বলিয়া চিঠিখানা বিনোদিনীর হাতে দিয়া মহেন্দ্র তীব্ৰদূষ্টিতে তাহার মুখের ভাব নিরীক্ষণ করিতে লাগিল । বিনোদিনী তাড়াতাড়ি চিঠি লইয়া দেখিল, খোলা চিঠি— লেফাফার উপরে তাহারই হস্তাক্ষরে বিহারীর নাম লেখা । লেফাফা হইতে বাহির করিয়া দেখিল, তাহারই লেখা সেই চিঠি । উলটাইয়া-পালটাইয়া কোথাও বিহারীর লেখা জবাব কিছুই দেখিতে পাইল না । একটুখানি চুপ করিয়া থাকিয়া বিনোদিনী মহেন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করিল, “চিঠিখানা তুমি পড়িয়াছ ?” বিনোদিনীর মুখের ভাব দেখিয়া মহেন্দ্রের মনে ভয়ের সঞ্চার হইল। সে ফস করিয়া মিথ্যা কথা কহিল, “না ।” বিনোদিনী চিঠিখানা টুকরা-টুকরা করিয়া ছিড়িয়া, পুনরায় তাহা কুটিকুটি করিয়া, জানালার বাহিরে ফেলিয়া দিল । মহেন্দ্ৰ কহিল, “আমি বাড়ি যাইতেছি ।” বিনোদিনী তাহার কোনো উত্তর দিল না । মহেন্দ্র । তুমি যেমন ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছ, আমি তাহাই করিব। সাত দিন আমি বাড়িতে থাকিব । কালেজে আসিবার সময় প্রত্যহ একবার এখানকার সমস্ত বন্দোবস্ত করিয়া খেমির হাতে দিয়া যাইব । দেখা করিয়া তোমাকে বিরক্ত করিব না। বিনোদিনী মহেঞ্জের কোনো কথা শুনিতে পাইল কিনা কে জানে, কিন্তু কোনো উত্তর করিল না— খোলা জানালার বাহিরে অন্ধকার আকাশে চাহিয়া রহিল। মহেন্দ্র তাহার জিনিসপত্র লইয়া বাহির হইয়া গেল ।