পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ग्नर्देौटज-ब्रछमांयलौ صbأو 8 মধ্যেও এই দুই নারীর ভিতরে ভিতরে আশা ছিল, এখনই মহেন্দ্র জাসিবে । শব্দমাত্রেই উভয়ের দেহে যে একটি চমক-সঞ্চার হইতেছিল, তাহা উভয়েই বুঝিতে পারিতেছিলেন । ক্রমে দিবাবসানের আলোক অস্পষ্ট হইয়া আসিল, কলিকাতার অন্তঃপুরের মধ্যে সেই গোধূলীর যে আভা, তাহাতে আলোকের প্রফুল্লতাও নাই, অন্ধকারের আবরণও নাই— তাহা বিষাদকে গুরুভার এবং নৈরাপ্তকে অশ্রীহীন করিয়া তোলে, তাহ কর্ম ও আশ্বাসের বল হরণ করে অথচ বিশ্রাম ও বৈরাগ্যের শান্তি আনয়ন করে না। রুগ্নগৃহের সেই শুষ্ক শ্ৰীহীন সন্ধ্যায় আশা নিঃশব্দপদে উঠিয়া একটি প্রদীপ জালিয়া ঘরে আনিয়া দিল । রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “বউমা, আলো ভালো লাগিতেছে না, প্রদীপ বাহিরে রাখিয়া দাও।” আশা প্রদীপ বাহিরে রাখিয়া আসিয়া বসিল । অন্ধকার যখন ঘনতর হইয়া এই ক্ষুদ্র কক্ষের মধ্যে বাহিরের অনন্ত রাত্রিকে আনিয়া দিল, তখন আশা রাজলক্ষ্মীকে মৃত্নস্বরে জিজ্ঞাসা করিল, “ম, তাহাকে কি একবার খবর দিব ।” রাজলক্ষ্মী দৃঢ়স্বরে কহিলেন, “না বউমা, তোমার প্রতি আমার শপথ রহিল, মহেন্দ্রকে খবর দিয়ে না।” শুনিয়া আশা স্তব্ধ হইয়া রহিল ; তাহার আর কাদিবার বল ছিল না । বাহিরে দাড়াইয়া বেহার কহিল, “বাবুর কাছ হইতে চিটুঠি আসিয়াছে।” শুনিয়া মুহূর্তের মধ্যে রাজলক্ষ্মীর মনে হইল, মহেঞ্জের হয়তো হঠাৎ একটা কিছু ব্যামো হইয়াছে, তাই সে কোনোমতেই আসিতে না পারিয়া চিঠি পাঠাইয়াছে । অমৃতপ্ত ও ব্যস্ত হইয়া কহিলেন, “দেখো তো বউমা, মহিন কী লিখিয়াছে।” আশা বাহিরের প্রদীপের আলোকে কম্পিতহস্তে মহেন্দ্রের চিঠি পড়িল । মহেন্দ্র লিখিয়াছে, কিছুদিন হইতে সে ভালো বোধ করিতেছিল না, তাই সে পশ্চিমে বেড়াইতে যাইতেছে। মাতার অস্থথের জন্য বিশেষ চিন্তার কারণ কিছুই নাই। তাহাকে নিয়মিত দেখিবার জন্ত সে নবীন-ডাক্তারকে বলিয়া দিয়াছে। রাত্রে ঘুম না হইলে বা মাথা ধরিলে কখন কী করিতে হইবে তাহাও চিঠির মধ্যে লেখা আছে— এবং দুই টিন লঘু ও পুষ্টিকর পথ্য মহেন্দ্র ডাক্তারখানা হইতে জানাইয়া চিঠির সঙ্গে পাঠাইয়াছে। আপাতত গিরিধির ঠিকানায় মাতার সংবাদ অবশুঅবশু জানাইবার জন্য চিঠিতে পুনশ্চের মধ্যে অনুরোধ আছে। এই চিঠি পড়িয়া আশা স্তম্ভিত হইয়া গেল— প্রবল ধিক্কার তাহার দুঃখকে অতিক্রম করিয়া উঠিল। এই নিষ্ঠুর বার্তা মাকে কেমন করিয়া শুনাইবে। আশার বিলম্বে রাজলক্ষ্মী অধিকতর উদবিগ্ন হুইয়া উঠিলেন। কহিলেন, “বউমা,