পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ጰዓ8 . t ब्रवैौटा-ब्रध्नांबलौ হইতে করুণাদৃষ্টি ছিল—তাহাদিগকে বিহারী বনের ছায়াটুকু ও গঙ্গার খোলা হাওয়া দান করিবার সংকল্প করিল। বালিতে বাগান লইয়া চীনে মিস্ত্রির সাহায্যে সে স্বন্দর করিয়া ছোটো ছোটো কুটির তৈরি করাইতে আরম্ভ করিয়া দিল । কিন্তু তাহার মন শাস্ত হইল না। কাজে প্রবৃত্ত হইবার দিন তাহার ষতই কাছে আসিতে লাগিল, ততই তাহার চিত্ত আপন সংকল্প হইতে বিমুখ হইয়া উঠিল । তাহার মন কেবলই বলিতে লাগিল, "এ-কাজে কোনো স্থখ নাই, কোনো রস নাই, কোনো সৌন্দৰ নাই—ইহা কেবল শুষ্ক ভারমাত্র।” কাজের কল্পনা বিহারীকে কখনো ইতিপূর্বে এমন করিয়া क्रिटे करव्र मॉहे । একদিন ছিল যখন বিহারীর বিশেষ কিছুই দরকার ছিল না ; তাহার সম্মুখে যাহা-কিছু উপস্থিত হইত, তাহার প্রতিই অনায়াসে সে নিজেকে নিযুক্ত করিতে পারিত। এখন তাহার মনে একটা-কী ক্ষুধার উদ্রেক হইয়াছে, আগে তাহাকে নিবৃত্ত না করিয়া অন্য কিছুতেই তাহার আসক্তি হয় না। পূর্বেকার অভ্যাসমতে সে এটা-ওটা নাড়িয়া দেখে, পরক্ষণেই সে-সমস্ত পরিত্যাগ করিয়া নিষ্কৃতি পাইতে চায় । বিহারীর মধ্যে যে যৌবন নিশ্চলভাবে স্বপ্ত হইয়া ছিল, যাহার কথা সে কখনো চিম্ভাও করে নাই, বিনোদিনীর সোনার কাঠিতে সে আজ জাগিয়া উঠিয়াছে । সদ্যোজাত গরুড়ের মতো সে আপন খোরাকের জন্য সমস্ত জগৎটাকে ঘাটিয়া বেড়াইতেছে। এই ক্ষুধিত প্রাণীর সহিত বিহারীর পূর্বপরিচয় ছিল না, ইহাকে লইয়া সে ব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছে ; এখন কলিকাতার ক্ষীণজীর্ণ স্বল্পায়ু কেরানিদের লইয়া সে কী করিবে । আষাঢ়ের গঙ্গা সম্মুখে বহিয়া চলিয়াছে। থাকিয়া থাকিয়া পরপারে নীলমেঘ ঘনশ্রেণী গাছপালার উপরে ভারাবনত নিবিড়ভাবে আবিষ্ট হইয় উঠে ; সমস্ত নদীতল ইস্পাতের তরবারির মতো কোথাও বা উজ্জল কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে, কোথাও বা আগুনের মতো ঝকঝক করিতে থাকে । নববর্ষার এই সমারোহের মধ্যে ধেমনি বিহারীর দৃষ্টি পড়ে, অমনি তাহার হৃদয়ের দ্বার উদঘাটন করিয়া আকাশের এই নীলগ্নিগ্ধ আলোকের মধ্যে কে একাকিনী ৰাহির হইয়া আসে, কে তাহার স্নানসিক্ত ঘনতরঙ্গায়িত কৃষ্ণকেশ উন্মুক্ত করিয়া দাড়ায়, বর্ষাকাশ হইতে বিদীর্ণমেঘচ্ছরিত সমস্ত বিচ্ছিন্ন রশ্মিকে কুড়াইয়া লইয়া কে একমাত্র তাহারই মুখের উপরে অনিমেষ দৃষ্টির দীপ্ত কাতরতা প্রসারিত করে ।