পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब्रर्देौडज-ब्रछनांवलौ ماه 8 বিহারী প্রফুল্লমুখে “ই মা, কাজ হসম্পন্ন হুইয়াছে, এখন আমার আর-কোনো ভাবনা নাই” বলিয়া একবার বাহিরের দিকে চাহিল । রাজলক্ষ্মী। আজ বউমা তোমার জন্য নিজের হাতে রাধিবেন, আমি এখান হইতে দেখাইয়া দিব । ডাক্তার বারণ করে— কিন্তু আর বারণ কিসের জন্য, বাছা । আমি কি একবার তোদের খাওয়া দেখিয়া যাইব না । _ বিহারী কহিল, “ডাক্তারের বারণ করিবার তো কোনো হেতু দেখি না, মা— তুমি না দেখাইয়া দিলে চলিবে কেন । ছেলেবেলা হইতে তোমার হাতের রান্নাই আমরা ভালোবাসিতে শিথিয়াছি— মহিনদার তো পশ্চিমের ডালরুটি খাইয়া অরুচি ধরিয়া গেছে— আজ সে তোমার মাছের ঝোল পাইলে র্বাচিয়া যাইবে । আজ আমরা দুই ভাই ছেলেবেলাকার মতো রেষারেষি করিয়া খাইব, তোমার বউমা অল্পে কুলাইতে পারিলে হয় ।” - যদিচ রাজলক্ষ্মী বুঝিয়াছিলেন, বিহারী মহেন্দ্রকে সঙ্গে করিয়া আনিয়াছে, তবু তাহার নাম শুনিতেই তাহার হৃদয় স্পন্দিত হইয়া নিশ্বাস ক্ষণকালের জন্য কঠিন হইয়া উঠিল । n সে-ভাবটা কাটিয়া গেলে বিহারী কহিল, “পশ্চিমে গিয়া মহিনদার শরীর অনেকটা ভালো হইয়াছে। আজ পথের অনিয়মে সে একটু স্নান আছে, স্নানাহার করিলেই শুধরাইয়া উঠিবে।” রাজলক্ষ্মী তবু মহেঞ্জের কথা কিছু বলিলেন না। তখন বিহারী কহিল, “মা, মহিনদা বাহিরেই দাড়াইয়া আছে, তুমি না ডাকিলে সে তো আসিতে পারিতেছে না।” রাজলক্ষ্মী কিছু না বলিয়া দরজার দিকে চাহিলেন । চাহিতেই বিহারী ডাকিল, ' “মহিনদা, এসো।” মহেন্দ্র ধীরে ধীরে ঘরে প্রবেশ করিল। পাছে হৃৎপিণ্ড হঠাৎ স্তন্ধ হইয়া যায়, এই ভয়ে রাজলক্ষ্মী মহেঞ্জের মুখের দিকে তখনই চাহিতে পারিলেন না। চক্ষু অর্ধনিমীলিত করিলেন। মহেন্দ্র বিছানার দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া চমকিয়া উঠিল, তাহাকে কে যেন মারিল। মহেক্স মাতার পায়ের কাছে মাথা রাখিয়া পা ধরিয়া পড়িয়া রহিল। বক্ষের স্পন্দনে রাজলক্ষ্মীর সমস্ত শরীর কাপিয়া কাপিয়া উঠিল । কিছুক্ষণ পরে অন্নপূর্ণ ধীরে ধীরে কহিলেন, “দিদি, মহিনকে তুমি উঠিতে বলে, নহিলেও উঠবে না।” 囑 রাজলক্ষ্মী কষ্টে বাক্যক্ষুরণ করিয়া কহিলেন, “মহিন, ওঠ, ।”