পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢२8 ब्रदौटल ब्रष्ळ्नांवलौ আমাদের মনে যদি তাহার কোনো নিদর্শন না পাই– আমরা যদি কেবল তাহাজের অবিকল অনুকরণ করিয়া চলি, তবে বুঝিব আমাদের মধ্যে আমাদের পূর্বপুরুষ আর সজীব নাই । শশের দাড়ি-পরা যাত্রার নারদ যেমন দেবর্ষি নারদ, আমরাও তেমনি আর্য । আমরা একটা বড়ো রকমের যাত্রার দল— গ্রাম্যভাষায় এবং কৃত্রিম সাজসরঞ্জামে পূর্বপুরুষ সাজিয়া অভিনয় করিতেছি। পূর্বপুরুষদের সেই চিত্তকে আমাদের জড় সমাজের উপর জাগাইয়া তুলিলে তবেই আমরা বড়ো হইব। আমাদের সমস্ত সমাজ যদি প্রাচীন মহৎ স্মৃতি ও বৃহৎ ভাবের দ্বারা আদ্যোপান্ত সজীব সচেষ্ট হইয়া উঠে, নিজের সমস্ত অঙ্গে প্রত্যঙ্গে বহুশতাব্দীর জীবনপ্রবাহ অনুভব করিয়া আপনাকে সবল ও সচল করিয়া তোলে, তবে রাষ্ট্রীয় পরাধীনতা ও অন্ত সকল দুৰ্গতি তুচ্ছ হইয়া যাইবে । সমাজের সচেষ্ট স্বাধীনতা আস্ত সকল স্বাধীনতা হইতেই বড়ো । জীবনের পরিবর্তন বিকাশ, মৃত্যুর পরিবর্তন বিকার। আমাদের সমাজেও দ্রুতবেগে পরিবর্তন চলিতেছে, কিন্তু সমাজের অভ্যস্তরে সচেতন অস্তঃকরণ নাই বলিয়া সে-পরিবর্তন বিকার ও বিশ্লেষণের দিকে যাইতেছে— কেহ তাহা ঠেকাইতে পারিতেছে না। সজীব পদার্থ সচেষ্টভাবে বাহিরের অবস্থাকে নিজের অমুকুল করিয়া আনে— আর নির্জীব পদার্থকে বাহিরের অবস্থাই সবলে আঘাত করিয়া নিজের আয়ত্ত করিয়া লয় । আমাদের সমাজে যাহা কিছু পরিবর্তন হইতেছে, তাহাতে চেতনার কার্ধ নাই ; তাহাতে বাহিরের সঙ্গে ভিতরের সঙ্গে কোনো সামঞ্জস্তচেষ্টা নাই – বাহির হইতে পরিবর্তন ঘাড়ের উপর আসিয়া পড়িতেছে এবং সমাজের সমস্ত সন্ধি শিথিল করিয়া দিতেছে । নূতন অবস্থা, নূতন শিক্ষা, নুতন জাতির সহিত সংঘর্ষ— ইহাকে অস্বীকার করা যায় না। আমরা যদি এমনভাবে চলিতে ইচ্ছা করি, যেন ইহারা নাই, ধেন আমরা তিন সহস্ৰ বৎসর পূর্বে বসিয়া আছি, তবে সেই তিন সহস্ৰ বৎসর পূর্বকার অবস্থা আমাদিগকে কিছুমাত্র সাহায্য করিবে না এবং বতর্মান পরিবর্তনের বন্ত আমাদিগকে ভাসাইয়া লইয়া যাইবে । আমরা বর্তমানকে স্বীকারমাত্র না করিয়া পূর্বপুরুষের দোহাই মানিলে তো পূর্বপুরুষ সাড়া দিবেন না। আমাদের পূর্বপুরুষ জামাদের দোহাই পাড়িয়া বলিতেছেন, “বর্তমানের সহিত সন্ধি করিয়া আমাদের কীর্তিকে রক্ষণ করে, তাহার প্রতি অন্ধ হইয়া ইহাকে সমূলে ধ্বংস হইতে দিয়ে না। আমাদের ভাব স্বত্রটিকে রক্ষা করিয়া সচেতনভাবে এক কালের সহিত আর-এক কালকে মিলাইয়া লও, নহিলে সূত্র আপনি ছিন্ন হুইয়া যাইবে।”