পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৫২ রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী


প্ৰতি মুহুর্তে আমাদের বক্ষণকুহরে ধ্বনিত হইয়া উঠিতেছে ; এবং আমরা নিজের অলক্ষ্যে শনৈঃশনৈ সেই ভারতবর্ষের দিকেই চলিয়াছি । অাজ যেখানে পথটি আমাদের মঙ্গলদীপোজ্জল গৃহের দিকে চলিয়া গেছে সেইখানে আমাদের গৃহ যাত্রারম্ভের অভিমুখে দাড়াইয়া একবার তোরা মা বলিয়া ডাক্‌ !” একবার স্বীকার করো, মাতার সেবা স্বহস্তে করিবার জন্য অন্য আমরা প্ৰস্তুত হইলাম ; একবার স্বীকার করো যে, দেশের উদ্দেশে প্ৰত্যহ আমরা পূজার নৈবেদ্য উৎসৰ্গ কবি ; একবার প্রতিজ্ঞা করো, জন্মভূমির সমস্ত মঙ্গল আমরা পরের কাছে নিঃশেষে বিকাইয়া দিয়া নিজেরা অত্যন্ত নিশ্চিন্তচিত্তে পদাহত অকালকুষ্মাণ্ডের ন্যায় অধঃপাতের সোপান হইতে সোপানান্তরে গড়াইতে গড়াইতে চরম লাঞ্ছনার তলদেশে অাসিয়া উত্তীৰ্ণ হইব না ।



স্বদেশী সমাজ' প্ৰবন্ধের পরিশিষ্ট


স্বদেশী সমাজ শীৰ্ষক যে-প্ৰবন্ধ আমি প্ৰথমে মিনাৰ্ভা ও পরে কৰ্জন রঙ্গমঞ্চে পাঠ করি , তৎসম্বন্ধে আমার শ্ৰদ্ধেয় সুস্থাৎ শ্ৰীযুক্ত বলাইচাঁদ গোস্বামী মহাশয় কয়েকটি প্ৰশ্ন উথাপন করিয়াছেন । নিজের ব্যক্তিগত কৌতুহলনিবৃত্তির জন্য এ প্রশ্নগুলি তিনি আমার কাছে পাঠান নাই, হিন্দুসমাজনিষ্ঠ ব্যক্তিমাত্রেরই যে যে স্থানে লেশমাত্ৰ সংশয় উপস্থিত হইতে পারে, সেই সেই স্থানে তিনি আমার মনোযোগ অাকৰ্ষণ করিয়া আন্তরিক কৃতজ্ঞতাভাজন হইয়াছেন । কিন্তু প্রশ্নোত্তরের মতো লিখিতে গেলে লেখা নিতান্তই আদালতের সওয়ালজবাবের মতো হইয়া দাঁড়ায় । সেরাপ খাপছাড়া লেখায় সকল কথা সুস্পষ্ট হয় না, এইজন্য সংক্ষিপ্ত প্ৰবন্ধ অাকারে অামার কথাটা পরিকুট করিবার চেষ্টা করি। কৰ্ণ যখন তাহার সহজ কবচটি ত্যাগ করিয়াছিলেন তখনই তাহার মৃত্যু ঘনাইয়া ছিল , অজুন যখন তাহার গাণ্ডীব তুলিতে পারেন নাই তখনই তিনি সামান্য দসুর হাতে পরাস্ত । হইয়াছিলেন । ইহা হইতে বুঝা যায়, শক্তি সকলের এক জায়গায় নাই— কোনো দেশ নিজের অস্ত্ৰশস্তুের মধ্যে নিজের বল রক্ষা করে, কোনো দেশ নিজের সর্বাঙ্গে শক্তি কবচ ধারণ করিয়া জয়ী হয় । যুরোপের যেখানে বল অামাদের সেখানে বল নহে । যুরোপ আত্মরক্ষার জন্য যেখানে উদ্যম প্ৰয়োগ করে আমাদের আত্মরক্ষার জন্য সেখানে উদ্যমপ্ৰয়োগ বৃথা । যুরোপের শক্তির ভাণ্ডার স্টেট অৰ্থাৎ সরকার । সেই স্টেট দেশের সমস্ত হিতকর