পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আত্মশক্তি ¢ ግፋ যদি শক্তি অর্জন না করি আন্তে আমার প্রাপ্যগুলি অধিকার করিবে ; আমি যদি পরীক্ষায় কেবলই ফাকি দিই তবে সফলতা অঙ্গের ভাগ্যেই জুটিবে— ইহা বিশ্বের অনিবাৰ্ধ নিয়ম । হে বঙ্গের নবীন যুবক, তোমার দুর্ভাগ্য এই যে, তুমি আপনার সম্মুখে কৰ্মক্ষেয় প্রস্তুত পাও নাই । কিন্তু, যদি ইহাকে অপরাজিতচিত্তে নিজের সৌভাগ্য বলিয়া গণ্য করিতে পার, যদি বলিতে পার, নিজের ক্ষেত্র আমি নিজেই প্রস্তুত করিয়া তুলিব, তবেই তুমি ধন্ত হইবে। বিচ্ছিন্নতার মধ্যে শৃঙ্খলা আনয়ন করা, জড়ত্বের মধ্যে জীবনসঞ্চার করা, সংকীর্ণতার মধ্যে উদার মনুষ্যত্বকে আহবান করা—এই মহৎ স্বষ্টিকার্ব তোমার সম্মুখে পড়িয়া আছে, এজন্য আনন্দিত হও । নিজের শক্তির প্রতি আস্থা স্থাপনা করে, নিজের দেশের প্রতি শ্রদ্ধা রক্ষণ করে এবং ধর্মের প্রতি বিশ্বাস হারাইয়ো না। আজ আমাদের কতৃপক্ষ বাংলাদেশের মানচিত্রের মাঝখানে একটা রেখা টানিয়া দিতে উদ্যত হইয়াছেন, কাল তাহারা বাংলার প্রাথমিক শিক্ষা চারখানা করিবার সংকল্প করিতেছেন, নিশ্চয়ই ইহা দুঃখের বিষয়— কিন্তু শুধু কি নিরাশ্বাস দুঃখভোগেই এই দুঃখের পর্যবসান। ইহার পশ্চাতে কি কোনো কর্ম নাই, আমাদের কোনো শক্তি নাই। শুধুই অরণ্যে রোদন ? ম্যাপে দাগ টানিয়া মাত্র বাংলাদেশকে দুই টুকরা করিতে গবর্মেন্ট পারেন ? আর, আমরা সমস্ত বাঙালি ইহাকে এক করিয়া রাখিতে পারি না ? বাংলাভাষাকে গবর্মেন্ট নিজের ইচ্ছামতো চারখানা করিয়া তুলিতে পারেন ? আর আমরা সমস্ত বাঙালি তাহার ঐক্যসূত্রকে অবিচ্ছিন্ন রাখিতে পারি না ? এই যে আশঙ্কা, ইহা কি নিজেদের প্রতি নিদারুণ দোষারোপ নহে। যদি কিছুর প্রতিকার করিতে হয়, তবে কি এই দোষের প্রতিকারেই আমাদের একান্ত চেষ্টাকে নিয়োগ করিতে হইবে না । সেই আমাদের সমুদয় চেষ্টার সম্মিলনক্ষেত্র, আমাদের সমুদয় উদযোগের প্রেরণাস্থল, আমাদের সমুদয় পূজা-উৎসর্গের সাধারণ ভাণ্ডার যে আমাদের নিতান্তই চাই। আমাদের কয়েক জনের চেষ্টাতেই সেই বৃহৎ ঐক্যমন্দিরের ভিত্তি স্থাপিত হইতে পারে, এই বিশ্বাস মনে দৃঢ় করিতে হইবে । যাহা দুরূহ তাহ অসাধ্য নছে, এই বিশ্বাসে কাজ করিয়া যাওয়াই পৌরুষ । এ-পর্যন্ত আমরা ফুটা কলসে জল ভরাকেই কাজ করা বলিয়া জানিয়াছি, সেই জন্যই বার বার আক্ষেপ করিয়াছি,— এদেশে কাজ করিয়া সিদ্ধিলাভ হয় না। বিজ্ঞানসভায় ইংরেজি ভাষায় পুরাতন বিষয়ের পুনরুক্তি করিয়াছি, অথচ আশ্চর্য হইয়া বলিয়াছি,— দেশের লোক আমার বিজ্ঞানসভার প্রতি এরূপ উদাসীন কেন । ইংরেজি ভাষায় গুটিকয়েক শিক্ষিত লোকে মিলিয়া রেজোলুশন পাস করিয়াছি, অথচ দুঃখ করিয়াছি— জনসাধারণের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কর্তব্য