পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আত্মশক্তি \و e \C( যে-সকল জাতিকে আমরা অনার্য বলিয়া ঘৃণাও করি, নিজের শ্রেষ্ঠতার অভিমানে আমরা তাহাদিগকে বিলুপ্ত করিবার চেষ্টা করি না। এই কারণে, আমাদের সমাজের মাঝখানেই হাড়ি-ডোম-চণ্ডাল স্বস্থানে আপন প্রাধান্ত রক্ষা করিয়াই চিরদিন ৰজায় ज्रो८छ् । পশুদিগকে আমরা নিকৃষ্ট জীব বলিয়াই জানি, কিন্তু তৰু বলিয়াছি, “আমরাও আছি, তাহারাও থাক” ; বলিয়াছি, “প্রাণিহত্যা করিয়া আহার করাটা প্রবৃত্তিরেষা ভূতানাং, নিবৃত্তিস্তু মহাফল’—সেটা একটা প্রবৃত্তি, কিন্তু নিবৃত্তিটাই ভালো।” যুরোপ বলে, “জন্তুকে খাইবার অধিকার ঈশ্বর আমাদিগকে দান করিয়াছেন।” যুরোপের শ্রেষ্ঠতার অভিমান ইতরকে যে কেবল ঘৃণা করে, তাহা নহে, তাহাকে নষ্ট করিবার বেলা ঈশ্বরকে নিজের দলভুক্ত করিতে কুষ্ঠিত হয় না। যুরোপের শ্রেষ্ঠতা নিজেকে জাহির করা এবং বজায় রাখাকেই চরম কর্তব্য বলিয়া জানে। অন্তকে রক্ষা করা যদি তাহার সঙ্গে সম্পূর্ণ খাপ খাইয়া যায়, তবেই অন্তের পক্ষে বাচোয়া, যে-অংশে লেশমাত্র খাপ না খাইবে সে-অংশে দয়ামায়া বাছবিচার নাই। হাতের কাছে ইহার যে দুই-একটা প্রমাণ আছে তাহারই উল্লেখ করিতেছি । বাঙালি যে একদিন এমন জাহাজ তৈরি করিতে পারিত যাহা দেখিয়া ইংরেজ ঈর্ষা অনুভব করিয়াছে, আজ বাঙালির ছেলে তাহা স্বপ্নেও জানেনা । ইংরেজ যে কেমন করিয়া এই জাহাজ-নির্মাণের বিদ্যা বিশেষ চেষ্টায় বাংলাদেশ হইতে বিলুপ্ত করিয়া দিয়াছে তাহা শ্ৰীযুক্ত সখারাম গণেশ দেউস্কর মহাশয়ের ‘দেশের কথা’ নামক বইখানি পড়িলে সকলে জানিতে পারিবেন। একটা জাতিকে, যে-কোনো দিকেই হউক, একেবারে অক্ষম পঙ্গু করিয়া দিতে এই সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতাবাদী কোনো সংকোচ অনুভব করে নাই । ইংরেজ আজ সমস্ত ভারতবর্ষকে বলপূর্বক নিরস্ত্র করিয়া দিয়াছে, অথচ ইহার নিদারুণতা তাহারা অস্তরের মধ্যে একবার অনুভব করে নাই । ভারতবর্ষ একটি ছোটো দেশ নহে, একটি মহাদেশবিশেষ । এই বৃহৎ দেশের সমস্ত অধিবাসীকে চিরদিনের জন্য পুরুষানুক্রমে অস্ত্ৰধারণে অনভ্যস্ত, আত্মরক্ষায় অসমর্থ করিয়া তোলা বে কতবড়ো অধম, যাহার এককালে মৃত্যুভয়হীন বীরজাতি ছিল, তাহাদিগকে সামান্য একটা হিংস্র পশুর নিকট শঙ্কিত নিরুপায় করিয়া রাখা যে কিরূপ বীভৎস অন্যায়, সে-চিন্তা ইহাদিগকে কিছুমাত্র পীড়া দেয় না। এখানে ধর্মের দোহাই একেবারেই নিষ্ফল— কারণ, জগতে অ্যাংলোস্তাক্সন জাতির মাহাত্ম্যকে বিস্তৃত ও স্বরক্ষিত করাই ইহারা