পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থ-পরিচয় Woo যখন কাল ঘনিয়ে আসছে, যখন চারিদিকের জল বেড়ে উঠছে, যখন আৰার অব্যক্তের মধ্যে তার ওই চরটুকু তলিয়ে স্বাৰার সময় হল— তখন তার সমস্ত জীবনের কর্মের যা কিছু নিত্য ফল তা ওই সংসারের ভরণীতে বোঝাই করে দিতে পারে । সংসার সমস্তই নেবে, একটি কণাও ফেলে দেবে না— কিন্তু যখন মাছৰ ৰলে, ওই সঙ্গে জামাকেও নাও, আমাকেও রাখো, তখন সংসার বলে, তোমার জন্তে জায়গা কোথায় — তোমাকে নিয়ে আমার হবে কী । তোমার জীবনের ফসল যা কিছু রাখৰায় তা সমস্তই রাখব কিন্তু তুমি তো রাখবার যোগ্য নও! প্রত্যেক মাকুব জীবনের কর্মের দ্বারা সংসারকে কিছু না কিছু দান করছে, সংসার তার সমস্তই গ্রহণ করছে, রক্ষা করছে, কিছুই নষ্ট ততে দিচ্ছে না— কিন্তু মানুষ যখন সেই সঙ্গে অহংকেই চিরন্তন করে রাখতে চাচ্ছে তখন তার চেষ্টা বৃথা হচ্ছে। এই-যে জীবনটি ভোগ করা গেল অহংটিকেই তার খাজনাস্বরূপ মৃত্যুর হাতে দিয়ে হিসাব চুকিয়ে যেতে হবে— ওটি কোনোমতেই জমাবার জিনিস নয়। রবীন্দ্রনাথ ছিন্নপত্রের একটি চিঠিতে ( সাহাজাদপুরের পথ, জুলাই, ১৮৯৪ ) ‘শৈশব সন্ধ্যা’ কবিতাটির ভাবব্যাখ্যা করিয়াছেন, নিম্নে তাহা উদ্ধৃত হইল : সন্ধ্যাবেলায় পাবনা শহরের একটি খেয়াঘাটের কাছে বোট বাধা গেল । ওপার থেকে জনকতক লোক বায়াতবলার সঙ্গে গান গাচ্ছে, একটা মিশ্রিত কলরব কানে এসে প্রবেশ করছে ; রাস্ত দিয়ে স্ত্রী পুরুষ যারা চলছে তাদের ব্যস্ত ভাব ; গাছপালার ভিতর দিয়ে দীপালোকিত কোঠাবাড়ি দেখা যাচ্ছে ; খেয়াঘাটে নানাশ্রেণী লোকের ভিড় । আকাশে নিবিড় একটা একরঙা মেঘ, সন্ধ্যাও অন্ধকার হয়ে এসেছে ; ওপারে সারবাধা মহাজনী নৌকায় আলো জলে উঠল, পূজাঘর থেকে সন্ধ্যারতির কাসরঘণ্টা বাজতে লাগল,— বাতি নিবিয়ে দিয়ে বোটের জানলায় বসে আমার মনে ভারি একটা অপূর্ব আবেগ উপস্থিত হল । অন্ধকারের জাৰরণের মধ্য দিয়ে এই লোকালয়ের একটি যেন সজীব হৃৎস্পন্দন আমার বক্ষের উপর এসে আঘাত করতে লাগল। এই মেঘলা আকাশের নিচে, নিৰিড় সন্ধ্যার মধ্যে, কত লোক, কত ইচ্ছা, কত কাজ, কত গৃহ, গৃহের মধ্যে জীবনের কত রহস্ত,– মাছুষে মাস্থষে কাছাকাছি ম্বে বাঘেৰি কত শতসহস্র প্রকারের ঘাতপ্রতিঘাত। বৃহৎ জনতার সমস্ত ভালোমন্দ