পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$98 a রবীন্দ্র-রচনাবলী । সমস্ত স্থখদুঃখ এক হয়ে তরুলতাবেষ্টিত ক্ষুদ্র বর্ষানীর দুই তীর থেকে একটি সকরুণ কুন্দর সুগভীর রাগিণীর মতো আমার হৃদয়ে এসে প্রবেশ করতে লাগল । আমার শৈশব সন্ধ্যা’ কবিতায় বোধ হয় কতকটা এই ভাব প্রকাশ করতে চেয়েছিলুম। কথাটা সংক্ষেপে এই যে, মানুষ ক্ষুত্র এবং ক্ষণস্থায়ী, অথচ ভালোমন্দ এবং স্থখদুঃখপরিপূর্ণ জীবনের প্রবাহ সেই পুরাতন স্বগভীর কলস্বরে চিরদিন চলছে ও চলবে— নগরের প্রাস্তে সন্ধ্যার অন্ধকারে সেই চিরন্তন কলধ্বনি শুনতে পাওয়া যাচ্ছে । মানুষের দৈনিক জীবনের ক্ষণিকতা ও স্বাতন্ত্র্য এই অবিচ্ছিন্ন স্বরের মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছে, সৰস্থদ্ধ খুব একটা বিস্তৃত আদিঅন্তশূন্ত প্রশ্নোত্তরহীন মহাসমুদ্রের একতান শব্দের মতে অস্তরের নিস্তব্ধতার মধ্যে গিয়ে প্রবেশ করছে । এক-এক সময়ে কোথাকার কোন ছিদ্র দিয়ে জগতের বড়ো বড়ো প্রবাহ হৃদয়ের মধ্যে পথ পায়— তার যে একটা ধ্বনি শোনা যায় সেটাকে কথায় তর্জমা করা অসাধ্য । রবীন্দ্রনাথ ছিন্নপত্রের একটি চিঠিতে ( সাহাজাদপুর, ৩০ আষাঢ়, ১৮৯৩) ‘অনাদৃত। ( বা ‘জালফেলা ) কবিতাটির যে ব্যাখ্যা করিয়াছেন নিম্নে তাহা উদ্ধৃত হইল : মনে করে একজন ব্যক্তি তার জীবনের প্রভাতকালে সমুদ্রের ধারে দাড়িয়ে দাড়িয়ে স্থধোদয় দেখছিল ; সে সমুদ্রটা তার আপনার মন কিংবা ওই বাহিরের বিশ্ব কিংবা উভয়ের সীমানামধ্যবর্তী একটি ভাবের পারাবার । সে-কথা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। যাই হোক সেই অপূর্ব সৌন্দর্যময় অগাধ সমুদ্রের দিকে চেয়ে চেয়ে লোকটার মনে হল এই রহস্তপাথারের মধ্যে জাল ফেলে দেখা যাক না কী পাওয়া যায়। এই বলে তো সে ঘুরিয়ে জাল ফেললে । নানারকমের অপরূপ জিনিস উঠতে লাগল— কোনোট বা হাসির মতো শুভ্ৰ, কোনোটা বা অশ্রীর মতো উজ্জল, কোনোটা বা লজ্জার মতো রাঙা । মনের উৎসাহে সে সমস্ত দিন ধরে ওই কাজই কেবল করলে— গভীর তলদেশে যে-সকল স্বন্দর রহস্য ছিল সেইগুলিকে তীরে এনে রাণীকৃত করে তুললে। . এমনি করে জীবনের সমস্ত দিনটি যাপন করলে । সন্ধ্যার সময় মনে করলে, এবারকার মতো যথেষ্ট হয়েছে, এখন এইগুলি নিয়ে তাকে দিয়ে আসা ধাকগে। কাকে ষে সে-কথাটা স্পষ্ট করে বলা হয়নি— হয়তো তার প্রেয়সীকে, হয়তো তার স্বদেশকে । কিন্তু বাকে দেৰে সে