পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&\e. রবীন্দ্র-রচনাবলী তরঙ্গবন্ধনে বঁাধি, নীলাম্বর অঞ্চলে তোমার সযত্বে বেষ্টিয়া ধরি সস্তপণে দেহখানি তার স্বকোমল স্থকৌশলে । এ কী স্থগম্ভীর স্নেহখেলা অম্বুনিধি, ছল করি দেখাইয়া মিথ্যা অবহেলা ধারি ধারি পা টিপিয়া পিছু হটি চলি যাও দূরে, যেন ছেড়ে যেতে চাও,—আবার আনন্দ পূর্ণ স্বরে উল্লসি ফিরিয়া আসি কল্পোলে ঝাপায়ে পড়ে বুকে — রাশি রাশি শুভ্ৰহাস্তে, অশ্র জলে, স্নেহগর্বস্বখে আৰ্দ্ৰ করি দিয়ে যাও ধরিত্রীর নির্মল ললাট আশীর্বাদে । নিত্যবিগলিত তব অন্তর বিরাট, আদি অন্ত স্নেহরাশি,—আদি অস্ত তাহার কোথা রে, কোথা তার তল, কোথা কুল । বলে কে বুঝিতে পারে তাহার অগাধ শাস্তি, তাহার অপার ব্যাকুলতা, তার স্বগম্ভীর মৌন, তার সমুচ্ছল কলকথা, তার হাস্য, তার অশ্রীরাশি —কখনো বা আপনারে রাখিতে পার না যেন, স্নেহপূর্ণ স্ফীতস্তনভারে উন্মাদিনী ছুটে এসে ধরণীরে বক্ষে ধর চাপি নির্দয় আবেগে ; ধরা প্রচণ্ড পীড়নে উঠে কঁাপি, রুদ্ধশ্বাসে উধব স্বরে চীৎকারি উঠিতে চাহে কঁাদি, উন্মত্ত স্নেহষ্ণুধায় রাক্ষসীর মতো তারে বাধি পীড়িয়া নাড়িয়া যেন টুটিয়া ফেলিয়া একেবারে অসীম অতৃপ্তিমাঝে গ্রাসিতে নাশিতে চাহ তারে প্রকাগু প্রলয়ে । পরক্ষণে মহা অপরাধী প্রায় পড়ে থাক তটতলে স্তব্ধ হয়ে বিষগ্ন ব্যথায় নিষঃ নিশ্চল ;– ধীরে ধীরে প্রভাত উঠিয়া এসে শাস্তদৃষ্টি চাহে তোমাপানে ; সন্ধ্যাসখী ভালোবেসে স্নেহকরম্পর্শ দিয়ে সান্থনা করিয়ে চুপেচুপে চলে যায় তিমির-মন্দিরে ; রাত্রি শোনে বন্ধুরূপে গুমরি-ক্রেন্দন তব রুদ্ধ অকুতাপে ফুলে ফুলে । আমি পৃথিবীর শিশু বসে আছি তব উপকূলে,