পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাহিনী বারেক শুধায়ে এসো— বোলো তারে, “ওগো ভাগ্যবান, এ মহা সংগীতধন কাহারে করিবে তুমি দান । এই ছন্দে গাথি লয়ে কোন দেবতার যশঃকথা স্বগের অমরে কবি মর্তলোকে দিবে অমরতা ?’ ” ভাষাশুন্য, অর্থহারা । বহ্নি উর্ধের্ব মেলিয়া অঙ্গুলি কী কহিছে স্বৰ্গ জানে ; অরণ্য উঠায়ে লক্ষ শাখা মমরিছে মহামন্ত্র ; ঝটিকা উড়ায়ে রুদ্র পাখা গাহিছে গর্জনগান ; নক্ষত্রের অক্ষৌহিণী হতে অরণ্যের পতঙ্গ অবধি, মিলাইছে এক স্রোতে সংগীতের তরঙ্গিণী বৈকুণ্ঠের শাস্তিসিন্ধুপারে । মানুষের ভাষাটুকু অর্থ দিয়ে বদ্ধ চারি ধারে, মানবের প্রয়োজনে প্ৰাণ তার হয়ে আসে। ক্ষীণ । পরিস্ফুট তত্ত্ব তার সীমা দেয় ভাবের চরণে ; ধূলি ছাড়ি একেবারে উধ্বমুখে অনন্ত গগনে উড়িতে সে নাহি পারে সংগীতের মতন স্বাধীন মেলি দিয়া সপ্তসুর সপ্তপক্ষ অর্থভারহীন । প্রভাতের শুভ্ৰ ভাষা বাক্যহীন প্রত্যক্ষ কিরণ জগতের মর্মদ্বার মুহুর্তেকে করি উদঘাটন । নির্বারিত করি দেয় ত্ৰিলোকের গীতের ভাণ্ডার ; যামিনীর শান্তিবাণী ক্ষণমাত্ৰে অনন্ত সংসার আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে, বাক্যহীন পরম নিষেধ নিমেষে নিবায়ে দেয় সর্ব খেদ সকল প্ৰয়াস, জীবলোক-মাঝে আনে মরণের বিপুল আভাস ; নক্ষত্রের ধ্রুব ভাষা অনির্বাণ অনলের কণা জ্যোতিষ্কের সূচীপত্রে আপনার করিছে সূচনা কেবল নিশ্বাসমাত্রে নিকুঞ্জে জাগায় নব আশা, দুৰ্গম পল্লবদুৰ্গে অরণ্যের ঘন অন্তঃপুরে যৌবনের জয়গান- সেইমত প্ৰত্যক্ষ প্ৰকাশ কোথা মানবের বাক্যে, কোথা সেই অনন্ত আভাস, কোথা সেই অর্থভেদী অভ্ৰভেদী সংগীত-উচ্ছাস, আত্মবিদারণকারী মর্মান্তিক মহান নিশ্বাস ? মানবের জীৰ্ণ বাক্যে মোর ছন্দ দিবে নব সুর, অর্থের বন্ধন হতে নিয়ে তারে যাবে কিছু দূর ভাবের স্বাধীন লোকে, পক্ষবান অশ্বরাজ –সম