পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S90 রবীন্দ্র-রচনাবলী রমেশ উত্তর না করিয়া নতমুখে বসিয়া রহিল। অন্নদাবাবু কহিলেন, “হেমনলিনীকে সব কথা বলা হইয়াছে ?” 20भव । ना, लिनि 0शनी छानन ना । অন্নদা। তঁহার তো জানা আবশ্যক। তোমার তো একলার বিবাহ নয়। রমেশ । আপনাকে আগে জানাইয়া তাহাকে জানাইবা স্থির করিয়াছি। অন্নদাবাবু ডাকিয়া উঠিলেন, “হেম ! হেম!” হেমনলিনী ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া কহিল, “কী বাবা ?” অন্নদা। রমেশ বলিতেছেন, উহার কী-একটা বিশেষ কাজ পড়িয়ছে, এখন উহার বিবাহ করিবার অবকাশ হইবে না । হেমনলিনী একবার বিবর্ণমুখে রমেশের মুখের দিকে চাহিল। রমেশ অপরাধীর মতো নিরুত্তরে বসিয়া রহিল । হেমনলিনীর কাছে এ খবরটা যে এমন করিয়া দেওয়া হইবে, রমেশ তাহা প্ৰত্যাশা করে নাই। অপ্ৰিয় বার্তা অকস্মাৎ এইরূপ নিতান্ত রূঢ়ভাবে হেমনলিনীকে যে কিরূপ মর্মান্তিকরূপে আঘাত করিল, রমেশ তাহা নিজের ব্যথিত অন্তঃকরণের মধ্যেই সম্পূর্ণ অনুভব করিতে পারিল। কিন্তু যে তীর একবার নিক্ষিপ্ত হয়, তাহা আর ফেরে না- রমেশ যেন স্পষ্ট দেখিতে পাইল এই নিষ্ঠুর তীর হেমনলিনীর হৃদয়ের ঠিক মাঝখানে গিয়া বিধিয়া রহিল । এখন কথাটা আর কোনোমতে নরম করিয়া লইবার উপায় নাই। সবই সত্য- বিবাহ এখন স্থগিত রাখিতে হইবে, রমেশের বিশেষ প্রয়োজন আছে, কী প্রয়োজন তাহাও সে বলিতে ইচ্ছা করে না। ইহার উপরে এখন আর নূতন ব্যাখ্যা কী হইতে পারে ? অন্নদাবাবু হেমনলিনীর দিকে চাহিয়া কহিলেন, “তোমাদেরই কাজ, এখন তোমরাই ইহার যা হয় একটা মীমাংসা করিয়া লও।” হেমনলিনী মুখ নত করিয়া বলিল, “বাবা, আমি ইহার কিছুই জানি না।” এই বলিয়া, ঝড়ের মেঘের মুখে সূর্যাস্তের স্নান আভাটুকু যেমন মিলাইয়া যায় তেমনি করিয়া সে চলিয়া গেল। অন্নদাবাবু খবরের কাগজ মুখের উপর তুলিয়া পড়বার ভান করিয়া ভাবিতে লাগিলেন। রমেশ নিন্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল । হঠাৎ রমেশ এক সময় চমকিয়া উঠিয়া চলিয়া গেল। বসিবার বড়ো ঘরে গিয়া দেখিল হেমনলিনী জানালার কাছে চুপ করিয়া দাড়াইয়া আছে। তাহার দৃষ্টির সম্মুখে আসন্ন পূজার ছুটির কলিকাতা জোয়ারের নদীর মতো তাহার সমস্ত রাস্তা ও গলির মধ্যে স্ফীত জনপ্রবাহে চঞ্চল-মুখর হইয়া \fồại(\ | রমেশ একেবারে তাহার পার্থে যাইতে কুষ্ঠিত হইল। পশ্চাৎ হইতে কিছুক্ষণের জন্য স্থিরদৃষ্টিতে তাহাকে দেখিতে লাগিল। শরতের অপরাহু-আলোকে বাতায়নবর্তিনী এই স্তব্ধমূর্তিটি রমেশের মনের } মধ্যে একটি চিরস্থায়ী ছবি আঁকিয়া দিল। ঐ সুকুমার কপোলের একটি অংশ, ঐ সযত্নরচিত কবরীর ভঙ্গি, ঐ গ্ৰীবার উপরে কোমলবিরল কেশগুলি, তাহারই নীচে সোনার হারের একটুখানি আভাস, বাম স্কন্ধ হইতে লম্বিত অঞ্চলের বঙ্কিম প্রান্ত, সমস্তই রেখায় রেখায় তাহার পীড়িত চিত্তের মধ্যে যেন কাটিয়া কাটিয়া বসিয়া গেল । রমেশ আস্তে আন্তে হেমনলিনীর কাছে আসিয়া দাড়াইল । হেমনলিনী রমেশের চেয়ে রাস্তার লোকদের জন্য যেন বেশি ঔৎসুক্য বোধ করিতে লাগিল। রমেশ বাস্পরুদ্ধকণ্ঠে কহিল, “আপনার কাছে আমার একটি ভিক্ষা আছে।” রমেশের কণ্ঠস্বরে উদবোেল বেদনার আঘাত অনুভব করিয়া মুহুর্তের মধ্যে হেমনলিনীর মুখ ফিরিয়া আসিল । রমেশ বলিয়া উঠিল, “তুমি আমাকে অবিশ্বাস করিয়ো না।”- রমেশ এই প্রথম হেমনলিনীকে ‘তুমি বলিল - “এই কথা আমাকে বলে যে, ভূমি আমাকে কখনো অবিশ্বাস করিবে: