পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SOR রবীন্দ্র-রচনাবলী কাছে না থাকিলে সেও সূখী হইবে না, আমিও নিশ্চিন্তু হইতে পারিব না। তাই আমার ইচ্ছতোমাকে একটা স্বাস্থ্যকর জায়গা বাছিয়া লইতে হইবে । অন্নদাবাবু রমেশের একটা অপরাধের অবকাশ পাইয়া সেই সুযোগে নিজের বড়ো বড়ো দাবিগুলা উপস্থিত করিতে আরম্ভ করিলেন। সে সময়ে রমেশকে তিনি যদি এটােয়া না বলিয়া গারো বা চেরাপুঞ্জির কথা বলিতেন, তবে তৎক্ষণাৎ সে রাজি হইত। সে কহিল, “যে আজ্ঞা, আমি এটােয়াতেই প্র্যাকটিস করিব।” এই বলিয়া রমেশ নিমন্ত্রণপ্রত্যাখ্যানের কার্যভার লইয়া প্ৰস্থান করিল। অনতিকাল পরে অক্ষয় ঘরে ঢুকিতেই অন্নদাবাবু কহিলেন, “রমেশ তাহার বিবাহের দিন এক সপ্তাহ পিছাইয়া দিয়াছে।” অক্ষয় । না না, আপনি বলেন কী ! সে কি কখনো হইতে পারে ? পরশু যে বিবাহ। অন্নদা । হইতে তো না পারাই উচিত ছিল- সাধারণ লোকের তো এমনতরো হয় না। কিন্তু আজকাল তোমাদের যে-রকম কাণ্ড দেখিতেছি, সবই সম্ভব । অক্ষয় অত্যন্ত মুখ গন্তীর করিয়া আড়ম্বর-সহকারে চিন্তা করিতে লাগিল। কিছুক্ষণ পরে কহিল, ” “আপনারা যাহাকে একবার সৎপাত্র বলিয়া ঠাওরাইয়াছেন, তাহার সম্বন্ধে দুটি চক্ষু বুজিয়া থাকেন। মেয়েকে যাহার হাতে চিরদিনের মতো সমৰ্পণ করিতে যাইতেছেন, ভালো করিয়া তাহার সম্বন্ধে খোঁজখবর রাখা উচিত। হােক-না কেন সে স্বর্গের দেবতা, তবু সাবধানের বিনাশ নাই।” অন্নদা। রমেশের মতো ছেলেকেও যদি সন্দেহ করিয়া চলিতে হয়, তবে তো সংসারে কাহারও সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ রাখা অসম্ভব হইয়া পড়ে । অক্ষয়। আচ্ছা, এই-যে দিন পিছাইয়া দিতেছেন, রমেশবাবু তাহার কারণ কিছু বলিয়াছেন ? অন্নদাবাবু মাথায় হাত বুলাইতে বুলাইতে কহিলেন, “না, কারণ তো কিছুই বলিল না— জিজ্ঞাসা করিলে বলে বিশেষ দরকার আছে।” অক্ষয় মুখ ফিরাইয়া ঈষৎ একটু হাসিল মাত্র । তাহার পরে কহিল, “বোধ হয় আপনার মেয়ের "কাছে রমেশবাবু একটা কারণ নিশ্চয় কিছু বলিয়াছেন।” उग्र | नष्ठु 0 ।। অক্ষয় । তাহাকে একবার ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিয়া দেখিলে ভালো হয় না ? “ঠিক বলিয়াছ" বলিয়া অন্নদাবাবু উচ্চৈঃস্বরে হেমনলিনীকে ডাক দিলেন। হেমনলিনী ঘরে ঢুকিয়া অক্ষয়কে দেখিয়া তাহার বাপের পাশে এমন করিয়া দাড়াইল যাহাতে অক্ষয় তাহার মুখ না দেখিতে 에 | অন্নদাবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, “বিবাহের দিন যে হঠাৎ পিছাইয়া গেল, রমেশ তাহার কারণ তোমাকে কিছু বলিয়াছেন ?” হেমনলিনী ঘাড় নাড়িয়া কহিল, “না।” অন্নদা। তুমি তাহাকে কারণ জিজ্ঞাসা করা নাই ? হেমনলিনী । না । অন্নদা। আশ্চর্য ব্যাপার। যেমন রমেশ, তুমিও দেখি তেমনি । তিনি আসিয়া বলিলেন, “আমার বিবাহে ফুরসত হইতেছে না”— তুমিও বলিলে, “বেশ, ভালো, আর-এক দিন হইবে ? বাস, আর কোনো কথাবার্তা নাই ! অক্ষয় হেমনলিনীর পক্ষ লইয়া কহিল, “একজন লোক যখন স্পষ্টই কারণ গোপন করিতেছে তখন সে কথা লইয়া তাহাকে কি কোনো প্রশ্ন করা ভালো দেখায় ? যদি বলিবার মতো কিছু হইত, তবে তো রমেশবাবু আপনিই বলিতেন।” হেমনলিনীর মুখ লাল হইয়া উঠিল। সে কহিল, “এই বিষয় লইয়া আমি বাহিরের লোকের কাছে কোনো কথাই শুনিতে চাই না। যাহা ঘটিয়াছে তাহাতে আমার মনে কোনো ক্ষোভ নাই ।” এই বলিয়া হেমনলিনী দ্রুতপদে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল ।